নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনার ভেন্যু বাতিল, অপরাজেয় বাংলায় শিক্ষকদের প্রতিবাদ সভা
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে উন্মুক্ত একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। আয়োজকেরা এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটার ভবনের আর সি মজুমদার মিলনায়তন ব্যবহারের অনুমতিও (বরাদ্দ) নিয়েছিলেন। তবে অনুষ্ঠান শুরুর ১০ মিনিট আগে সেমিনারের জন্য বরাদ্দ বাতিল করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করতে না পেরে বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন আয়োজকরা।
সেমিনারের মুখ্য বক্তা ঢাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বেলা আড়াইটার দিকে কলা ভবনের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির আমাদের ফোন দিয়ে জানান হল বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।
এবিষয়ে ডিন আবদুল বাছির একটি গণমাধ্যমকে, মিলনায়তন ব্যবহারের নীতিমালা আছে। শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেওয়া হলেও তাঁরা (ডিন) অবহিত হন, এখানে সরকার ও রাষ্ট্রকে হেয় করা হতে পারে। সে জন্য আয়োজকদের বিনয়ের সঙ্গে না করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় নেটওয়ার্ক 'জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১: আমরা কেন উদ্বিগ্ন' শিরোনামে এই আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল।
অনুমতি বাতিলের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে সেখান থেকে মৌন মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গিয়ে প্রতিবাদ সভা করেছেন আয়োজকেরা।
প্রতিবাদ সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফ বলেন, 'অনুষ্ঠান শুরুর দশ মিনিট আগে আমাদের জানানো হয় অনুষ্ঠানটি হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলে ৭৩ অধ্যাদেশ অনুসারে। এটি ৭৩ এর অধ্যাদেশের লংঘন। সরকার নতুন শিক্ষানীতি নিয়ে যে ব্যবস্থা করেছে– সেটির ভালো-মন্দ দিক নিয়ে পর্যালোচনা করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল। শিক্ষাক্রম নিয়ে মানুষের মতামত শুনতে হবে। যারা শিক্ষক, অভিভাবক তাদের কথা শুনতে হবে।'
প্রতিবাদ সভায় অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান বলেন, "শিক্ষাবিদ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে প্রজন্ম তৈরির যে রূপরেখা তৈরি হচ্ছে, তার সবল ও দুর্বল দিক নিয়ে কথা বলা। এত কোমল একটা আয়োজন, যার সাথে সরকারের গদি নড়ে যাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই, সেটি নিয়েও কথা বলতে দিল না। আমাদের মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ চাপে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটা কলঙ্কময় অধ্যায়ের সূচনা করলো।"
অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, "রাষ্ট্র একটা শিক্ষাক্রম চালু করছে তা নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। একটি নিরীহ একটা প্রোগ্রাম। বর্তমান কারিকুলাম বদলাতে হবে সে দাবি কি কেউ করেছিল? এদেশের শিক্ষায় অনেক সমস্যা, তার মধ্যে শিক্ষাক্রম সর্বশেষ সমস্যা। আপনারা (সরকার) ভালো শিক্ষক দেন নাই, শিক্ষায় ভালো বরাদ্দ দেন নাই– সেসব মূল সমস্যা। এ সরকার, আগের সরকার কেউ শিক্ষায় গুরুত্ব দেয় নাই।"
তিনি আরো বলেন, "আপনি শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াবেন না, ভালো বেতন দেবেন না, আর ভাবছেন শিক্ষানীতির খোলস বদলালে সব ঠিক হয়ে যাবে? বিদ্যমান কারিকুলামকে আপনারা দোষ দিলেন– এর মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য হয়, মুখস্থ বিদ্যা হয় বলে। অথচ ক্লাসে ভালো মানের শিক্ষক দেননি– তাই শিক্ষকেরা লেখাপড়া বাদে বাকি সব কিছুতে ব্যস্ত। কম বেতন দেওয়ার কারণে তারা প্রাইভেট পড়ায়।"
প্রতিবাদ সমাবেশে অধ্যাপক নাছির আহমেদ বলেন, "নতুন শিক্ষাক্রমে প্রচলিত ধারায় বিজ্ঞানের ৩০ শতাংশ রেখে সব ছড়িয়ে ফেলা হয়েছে। গণিত, বিজ্ঞান সংকুচিত করে শিল্প সংস্কৃতি, জীবন-জীবিকা এসব বাড়াচ্ছেন কেন? সাধারণ শিক্ষার্থীদের কেন কারিগরি শিক্ষার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। পশ্চিমা, আমেরিকানরা যে প্রজেক্ট দিচ্ছে তা গিলছেন আপনারা, দেশের মানুষের কথা ভাবছেন না।"
প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসির আহমেদ, সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের নেতা রাখাল রাহা প্রমুখ।