প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য দেখে বিষ্মিত হচ্ছি: সুলতানা কামাল
মানবাধিকারকর্মী ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, 'আমাদের প্রার্থীদের যেভাবে সম্পদ বেড়েছে, বৈধ উপায়ে এভাবে সম্পদ বাড়ে কি না সেটা আসলে আমিও জানি না। জানলে আমরাও কিছু সম্পদ বাড়ানোর চেষ্টা করতাম।'
আজ মঙ্গলবার দুপুরে টিআইবির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত "নির্বাচনী হলফনামার তত্থচিত্র: জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছে?" বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ ও "নো ইয়োর ক্যান্ডিডেট" ড্যাশবোর্ড উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সুলতানা কামাল বলেন, 'প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য দেখে বিষ্মিত হচ্ছি।'
তিনি বলেন, 'আমরা এদেশে দুটি সমাজ দেখছি। একটি হচ্ছে অনেক বেশি সম্পদশালী। আরেকটি সমাজ দিন আনে দিন খায়। অনেকের দিন এনে দিনে খাওয়াও জুটছে না।'
তিনি আরো বলেন, 'আমরা যে সম্পদের পাহাড় দেখছি, এখন আমাদের দেশে এটাই নিউ নরমাল (নতুন স্বাভাবিকতা)। কিছু মানুষ হাজার হাজার কোটি টাকার ওপরে থাকবে, আর কিছু মানুষ প্রতিদিন কীভাবে দিন চালাবে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাবে। এটা তো আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল না, এটা তো আমাদের অঙ্গীকার ছিল না। আমাদের তো একটি সাম্যের অধিকার ছিল।'
সুলতানা কামাল বলেন, 'আমাদের তো নিয়মই যে একটি পরিবারের ১০০ বিঘার বেশি জমি থাকতে পারবে না। আমরা দেখছি এরও কয়েক গুণ বেশি জমি রয়েছে আমাদের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের। একটি সময়েরও সীমারেখা আমরা দেখছি না। এত অল্প সময়ে এত সম্পদ বাড়ানো কীভাবে কিছু কিছু মানুষের জন্য সম্ভব হয়েছে?'
তিনি বলেন, 'এ সম্পদ আমরা বাইরে থেকে এনে কিংবা কোথাও থেকে কৃত্তিমভাবে তৈরি করি নাই। আমাদের দেশের মধ্যেই যে সম্পদ রয়েছে, সেখান থেকে কেউ নিয়ে নিচ্ছে, আর কেউ পাচ্ছে না। একটি অসম সমাজ আমরা তৈরি করেছি। হলফনামায় যে তথ্য এসেছে তা আমাদের কি বার্তা দিচ্ছে? এই বার্তাই দিচ্ছে যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ভঙ্গ হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, 'বিশেষ করে যারা শাসক গোষ্ঠী আছে, যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবি করছে, তাদের হাতে যখন দেশ তখন আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কত বাইরে কাজ করছি। সেখানে আমাদের প্রতিনিধিত্ব যারা করছেন, তারা আমাদের কি অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছেন? সেই বার্তা কিন্তু আমরা এ হলফনামা থেকে পাচ্ছি।'
এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, 'আমরা একটি বৈষম্যমূলক সমাজ তৈরি করছি। আমরা অতি দ্রুত ধনী হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে গেছি। আবার সেটা নিয়ে গর্বও করছি। আমরা বলছি যে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়ন তো কিছু কিছু মানুষের হচ্ছে। আমাদের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র কয়েকটি মানুষ আমাদের সম্পদের সমস্ত কিছু দখল করেছে।'