পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে হচ্ছেন?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী শপথ নিচ্ছেন আজ বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায়। নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের। এ কারণে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে হচ্ছেন, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
মোমেনের সঙ্গে বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও বাদ পড়েছেন নতুন মন্ত্রিসভা থেকে। কাজেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে নতুন কেউই আসছেন।
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অভিজ্ঞ কাউকেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলানোর গুরুদায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে।
নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া সংসদ সদস্যদের মধ্যে আগেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও দীপু মনির। এছাড়া বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদও কিছুদিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
এর মধ্যে দিনাজপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচিত আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০১৪-২০১৮ মেয়াদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী এর আগে ২০১২-২০১৩ মেয়াদে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন। সরকারের হয়ে বিভিন্ন দেশের কুটনৈতিক মিশনে তিনি সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আলোচনা রয়েছে।
দিনাজপুরের সন্তান আবুল হাসান মাহমুদ আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন।
গত পাঁচ বছর তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে তাকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেও আলোচনা রয়েছে।
এছাড়া ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিরও। চাঁদপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত দীপু মনি এবারও পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন।
অতীত অভিজ্ঞতা বিবেচনায় দীপু মনি এবারও হয়তো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম-৭ আসন আসন থেকে নির্বাচিত হাছান মাহমুদ গত পাঁচ বছর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভায় আবারও মন্ত্রিত্ব পেতে যাচ্ছেন তিনি।
২০০১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ছিলেন হাছান মাহমুদ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করার পূর্ব-অভিজ্ঞতা আছে হাছান মাহমুদের। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেই বিবেচনায় হাছান মাহমুদকেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা আছে।
নতুন মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে স্থান পেয়েছেন ঢাকা-৯ আসন থেকে নির্বাচিত সাবের হোসেন চৌধুরীও। বর্তমান সংসদে তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৯৭-১৯৯৮ মেয়াদে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এবং ১৯৯৮-২০০১ মেয়াদে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। এছাড়া ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাবের হোসেন চৌধুরী পরিচিত মুখ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সাবের হোসেন চৌধুরী ইউনিভার্সিটি অভ লন্ডন, ইউনিভার্সিটি অভ ওয়েস্টমিনস্টারে পড়াশোনা করেছেন। অর্থনীতি ও রাজনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি এবং আইনে ডিপ্লোমা রয়েছে তার।
ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি নির্বাচিত হয়ে এবং তারপর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভূমিকা রেখে আলাদা অবস্থান তৈরি করে নেন তিনি। জাতীয় সংসদগুলোর আন্তর্জাতিক সংস্থা আইপিইউ জাতিসংঘের স্থায়ী পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করে।
সাবের হোসেন চৌধুরীর আন্তর্জাতিক পরিচিতি কাজে লাগাতে তাকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম ও ভালো যোগাযোগ থাকা চৌকস রাজনীতিবিদ সাবের হোসেন চৌধুরীও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে দলের মধ্যে। তবে পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতার সুবাদে সাবেরকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন বলে আলোচনা আছে।
তবে আজ সন্ধ্যায় শপথগ্রহণের পর সব মন্ত্রিসভার সব সদস্যের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তারপরই স্পষ্ট হবে কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন।