জাবিতে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক ৪
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বহিরাগত এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেতা ও একজন বহিরাগত যুবকের বিরুদ্ধে।
শনিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলসংলগ্ন জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত যুবক মামুন (৪৫)। তাদের মধ্যে মোস্তাফিজ মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।
এ ঘটনায় ৪ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন: মোস্তাফিজুর রহমান, মো. সাব্বির হাসান সাগর, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামান।
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস অ্যান্ড ট্রাফিক) আব্দুল্লা হিল কাফি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ধর্ষণের ঘটনায় ইতিমধ্যে আমরা মোট ৬ জন অভিযুক্তের মধ্যে মূল আসামি মোস্তাফিজুর রহমানসহ মোট ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।'
সূত্র জানায়, ভুক্তভোগীদের বাসায় থাকার সুবাদে আগে থেকেই তাদের সাথে পরিচয় ছিল অভিযুক্ত মামুনের। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে গতকাল সন্ধ্যায় অভিযুক্ত মামুন ভুক্তভোগীর স্বামীকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে নিয়ে আসেন। পরে মামুন কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অপর অভিযুক্ত মোস্তাফিজের কাছে থাকবেন জানালে ভুক্তভোগীর স্বামী তার স্ত্রীকে ফোন করে বাসায় থাকা মামুনের কিছু কাপড় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে বলেন।
এরপর অভিযুক্ত মোস্তাফিজ ও মামুন মিলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের 'এ' ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন। পরে কাপড় নিয়ে ভুক্তভোগী নারী ক্যাম্পাসে এলে তার কাছ থেকে কাপড় নিয়ে কক্ষে রেখে আসতে যান মামুন। এরপর মামুন কক্ষ থেকে ফিরে এসে ভুক্তভোগী নারীকে বলেন, তার স্বামী হলের অন্য ফটক (জঙ্গলের দিক) দিয়ে আসবেন, সেদিকে যেতে। পরে ওই নারীকে হলসংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করেন মোস্তাফিজ এবং মামুন।
ভুক্তভোগী ওই নারী গণমাধ্যমকে বলেন, 'মামুন ভাই আমাদের বাসায় ভাড়া থাকত। তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকে তার (মামুন) রেখে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বলেন। আমি তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। তখন তিনি আমাদের বাসায় থাকবেন না বলে জানান। এছাড়া তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের মোস্তাফিজ ভাইয়ের কাছে থাকবেন বলেও জানান। এরপর মামুন আমার কাছ থেকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসেন। পরে আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। তার সাথে মোস্তাফিজ ভাইও ছিলেন। তখন তারা আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান টিবিএসকে বলেন, 'ঘটনা শুনেছি। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের নিয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলে এসেছি। এ ঘটনায় পুলিশ আমাদের কাছে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। হলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুক, আমরা শাস্তির ব্যবস্থা করব।'
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল গণমাধ্যমকে বলেন, 'মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে।'