এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের ৬ মাসের মধ্যে সুবিধা প্রদানে হাইকোর্টের রায়
অবসর কল্যাণ বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের নামে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং কর্মচারীদের বেতনের ১০ শতাংশ কেটে রাখার বিপরীতে আর্থিক ও অবসর সুবিধা অবসরের ছয় মাসের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ-সংক্রান্ত রিট নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হাইদার এবং বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন।
রায় প্রদানের সময় পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, 'এটা চিরন্তন সত্য যে শিক্ষকদের রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট পেতে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। এই হয়রানি থেকে তারা কোনোভাবেই পার পান না। একজন প্রাথমিকের শিক্ষক কত টাকা বেতন পান, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। এজন্য তাদের অবসরভাতা ৬ মাসের মধ্যে দিতে হবে। এই অবসরভাতা পাওয়ার জন্য শিক্ষকরা বছরের পর বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে পারেন না।'
রিটকারী শিক্ষক ও কর্মচারীদের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মামুন চৌধুরী।
রিটকরীদের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া এ রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫ লাখের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন। তাদেরকে অবসরের ৬ মাসের মধ্যে বেতনের ১০ শতাংশ কেটে রাখার বিপরীতে আর্থিক ও অবসর সুবিধা দিতে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এই আইনজীবীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা, ১৯৯৯-এর প্রবিধান-৬ এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা, ২০০৫ এর প্রবিধান-৮ অনুযায়ী শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ—মোট ৬ শতাংশ কর্তনের বিধান ছিল। এর বিপরীতে শিক্ষকদের ট্রাস্টের তহবিল থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কিছু আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হতো।
কিন্তু ২০১৭ সালে বিধান সংশোধন করে ৪ শতাংশ ও ৬ শতাংশ মোট ১০ শতাংশ কর্তনের বিধান করে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
তবে অতিরিক্ত অর্থ কর্তনের বিপরীতে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কোনো বাড়তি আর্থিক সুবিধার বিধান করা হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে, বেতনের ১০ শতাংশ হারে কর্তনে ২০১৭ সালের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস হতে অবসর সুবিধা বোর্ডে ৬ শতাংশ এবং কল্যাণ ট্রাস্টে ৪ শতাংশ টাকা জমা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
রিটাকারীদের আইনজীবী জানান, অতিরিক্ত অর্থ কর্তনের বিপরীতে কোনো আর্থিক সুবিধা না বাড়িয়েই শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ মোট ১০ শতাংশ টাকা কর্তনের আদেশের কারণে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক ও কর্মচারীদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত অর্থ কর্তনের আদেশ বাতিল করার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় শিক্ষক ও কর্মচারীরা ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক জারীকৃত প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন।
এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনটি কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে বিবাদীদের প্রতি ৪ সপ্তাহের রুল জারি করেন। এ ছাড়াও এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতনের ৬ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ কর্তনের বিপরীতে বাড়তি আর্থিক সুবিধা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে সম্পূরক একটি রুল জারি করা হয়।
এসব রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতনের ১০ শতাংশ কর্তনের বিপরীতে আর্থিক ও অবসর সুবিধা অবসরের ৬ মাসের মধ্যে প্রদানের নির্দেশনা দিয়ে রায় দিলেন।