জাবির ২ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ বাতিলের দাবিতে শাহবাগে নাগরিক সমাবেশ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নতুন কলাভবনের দেয়াল থেকে বঙ্গবন্ধুর একটি পুরোনো চিত্রকর্ম মুছে ধর্ষণবিরোধী দেয়ালচিত্র আঁকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ বাতিলের দাবিতে সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টায় শাহবাগে এক নাগরিক সংহতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী ও অমর্ত্য রায়।
সভায় বক্তারা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন সময় একটি গ্রাফিতি আঁকা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো আন্দোলনে গ্রাফিতি আঁকা একটি নিয়মিত ও গৃহীত সাংস্কৃতিক চর্চা।
তারা বলেন, ভিসিবিরোধী আন্দোলনের গ্রাফিতিটি মুছে সেখানে জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শেখ মুজিবর রহমানের একটি ছবি আঁকা হয়। তিন বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনে পূর্বের সাংস্কৃতিক চর্চাকে বজায় রেখে 'স্বৈরাচার এবং ধর্ষণ থেকে আজাদী' শীর্ষক গ্রাফিতিটি আঁকা হয়।
এর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন মেয়াদোর্ত্তীণ শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একটি স্মারকলিপি দেয়। কোনো অভিযোগ নয়, কেবল সেই স্মারকলিপির ওপর ভিত্তি করে জাবি প্রশাসন স্বউদ্যোগে নীতিবহির্ভুতভাবে এবং অগণতান্ত্রিক উপায়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দুই শিক্ষার্থী ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী এবং অমর্ত্য রায়ের বহিষ্কারাদেশ জারি করে এবং রাষ্ট্রীয় মামলা করার অফিস আদেশ প্রদান করে।
সভায় বক্তারা বলেন, একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করার আদেশের মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসন ধারণাকে ব্যাহত করেছে। সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বক্তব্য থেকে প্রশাসনের অর্থনৈতিক অনৈতিকতা এবং চলমান আওয়ামী সরকারের প্রতি নতজানু মানসিকতার কথা উঠে আসে
তারা বলেন, জাবি হলে মেয়াদোর্ত্তীণ ও ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত শিক্ষার্থীরা অবাধে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে এবং এই ন্যাক্কারজনক ধর্ষণকান্ডে যুক্ত ছিল, অথচ হলগুলোতে চলমান শিক্ষার্থীরা থাকার জন্য সিট পায় না। এর থেকে বোঝা যায় কেবল আওয়ামী দলের লেজুড়বৃত্তি করতে গিয়ে জাবি প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি বহুমাত্রিকভাবে চরম অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক আচরণ করে আসছে। 'স্বৈরাচার এবং ধর্ষণ থেকে আজাদী' শীর্ষক গ্রাফিতির জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রমাণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ধর্ষক ও স্বৈরাচারের পাহারাদার হয়ে উঠেছে।
সবশেষে নাগরিক সংহতি সমাবেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অবিলম্বে ধর্ষকদের বিচারসহ ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আঁকার জন্য ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী এবং অমর্তা রায়ের বহিষ্কারাদেশ বাতিল এবং মামলার প্রস্তুতি স্থগিত করা না হলে, নাগরিক আন্দোলন আরও বৃহত্তর ভাবে চলমান থাকবে।
সমাবেশ চলাকালে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক উদ্যোগ-কানাডা এবং নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশন সংহতি বিবৃতি পাঠিয়েছে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ, নৃত্তত্ববিভাগের শিক্ষক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, দর্শন বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ নিজার, শিক্ষক মাসুদ ইমরান মান্নু, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিমউদ্দীন, নৃতত্ত্ববিভাগের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন, আবদুর রউফ কলেজের শিক্ষক অমূল্য বৈদ্য কর, ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাগীব নাইম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রমু।
এসময় সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন-আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, উত্তরা ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের প্রধান সামজীর আহমেদ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের শিক্ষক অলিউর সান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শরৎ চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সোমজিৎ জয়দ্বীপ, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সম্পাদক মফিজুর রহমান লাল্টু, প্রফেসর এবং ড. হারুন অর রশীদ, উদীচী শিল্পী-গোষ্ঠী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, নারী অধিকার কর্মী, গবেষক, পরিবেশ আন্দোলনকর্মী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা এবং অ্যাকটিভিস্টরা।