আবারও একদিনে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেন ১৭৯ বিজিপি সদস্য
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের জেরে বাংলাদেশে আবারও একদিনে পালিয়ে এসেছেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ – বিজিপির ১৭৯ সদস্য।
সোমবার (১১ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের জামছড়ি এলাকার ৪৫–৪৬ নম্বর সীমান্ত পিলারের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে ২৯ বিজিপি সদস্য পালিয়ে আসেন। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন আরও ১৫০ জন।
এদিকে নাইক্ষ্যংছড়িতে গুলিতে স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, গুলিটি মিয়ানমার থেকে ছোড়া হয়েছে।
ফেরত পাঠানোর পর নতুন করে পালিয়ে আশ্রয়
সোমবার রাত ৯টায় বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, সারাদিনে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার বিজিপির ১৭৯ সদস্য পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
'এর মধ্যে দুপুরে ২৯ জন, সন্ধ্যার পর আরও ১৫০ জন পালিয়ে আসেন। তাদের অস্ত্র জমা নেওয়ার পর বিজিবির [বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ] হেফাজতে নেওয়া হয়েছে,' বলেন তিনি।
দ্বিতীয় ধাপে ১৫০ জন বিজিপি সদস্যের আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম। এর আগে এ দিন দুপুরে ২৯ জন বিজিপি সদস্যের বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের কথা জানান তিনি।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে সংঘাত: আবারও পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেন বিজিপির ২৯ সদস্য
তিনি বলেন, 'বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের (১১ বিজিবি) অধীন জামছড়ি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিজিপির অংথাপায়া ক্যাম্প থেকে ২৯ জন এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। অস্ত্র জমা নেওয়ার পর তাদের বিজিবি হেফাজতে নেওয়া হয়।'
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জেরে ৪ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন বিজিপিসহ মিয়ানমারের ৩৩০ নাগরিক।
১৫ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে বিজিপির ৩০২ সদস্য, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
সীমান্তের ওপার থেকে আসা গুলিতে আহত বাংলাদেশি
সোমবার নাইক্ষ্যংছড়িতে গুলিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, গুলিটি মিয়ানমার থেকে ছোড়া হয়েছে।
আহত ইউপি সদস্যের নাম সাবের আহমদ। তিনি নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওর্য়াডের সদস্য।
নাইক্ষ্যংছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন জানান, বিকেল ৪টার দিকে সীমান্ত এলাকা জামছড়ি মসজিদের পাশে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করছিলেন সাবের আহমদ। এ সময় হঠাৎ সীমান্তের ওপার থেকে আসা একটা গুলি তাকে আঘাত করে।
'গুলিটি তার কোমরে এসে লাগে। তাৎক্ষণিকভাবে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,' বলেন চেয়ারম্যান ইমন।
এ ব্যাপারে বিজিবি বা স্থানীয় প্রশাসনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরাও এ ধরনের গুলিবিদ্ধ কেউ হাসপাতালে এসেছেন কি না নিশ্চিত করতে পারেননি।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর বান্দরবান ও কক্সবাজার প্রতিনিধি