২০১০ সালে এমভি জাহান মনি ছিনতাই: ১০০ দিন পর ৪ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার
২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় ৪৩ হাজার ১৫০ টন নিকেল আকরিক নিয়ে যাত্রাকারী এমভি জাহান মনির কর্মকর্তারা একটি মর্মান্তিক দুঃসংবাদ পান।
তারা জানতে পারেন, ভারতের লাক্ষা দ্বীপ থেকে প্রায় ১৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে আরব সাগরে থাকা জাহাজটি জলদস্যুদের হামলার শিকার হয়েছে।
সর্বজনীন সমন্বিত সময় ০৯:৪২ মিনিটে ন্যাটো একটি সতর্ক বার্তা প্রচার করে।
এতে বলা হয়, '০৮° ১১ উত্তর ০৭১° ৪৩ পূর্ব অবস্থানে জলদস্যু / ১ স্কিফের হাতে একটি বাণিজ্য জাহাজে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।'
কয়েক মিনিট পর ন্যাটো পরিষ্কার বার্তা দেয়, 'জাহাজটি ছিনতাই করা হয়েছে।'
ঘণ্টাখানেক পর চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা জাহাজের নাবিকদের কাছ থেকে একটি ফোন পান।
তারা অফিসিয়ালি জানায়, সোমালি জলদস্যুরা তাদের জাহাজ দখল করে নিয়েছে।
সোমালিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা
২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়া থেকে যাত্রা করেছিল এমভি জাহান মনি। জাহাজটি সিঙ্গাপুর বন্দরে যাত্রাবিরতি করে এবং ২৭ নভেম্বর গ্রিসের উদ্দেশে রওনা হয়।
এক মাসেরও বেশি সময় ২৫ নাবিক ও প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীসহ মোট ২৬ জন মানুষ সমুদ্রে ছিলেন। ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে ছিনতাই হয় জাহাজটি। এরপর জাহাজটিকে সোমালিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দেয় জলদস্যুরা।
জাহাজটি ১১ ডিসেম্বর সোমালিয়ার উপকূলের কাছে নোঙর করে। ওইদিনই নাবিকেরা জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের সব ধরনের চেষ্টা করে। কিন্তু পরদিন বিকেলের আগে তা সম্ভব হয়নি।
সেসময় তাদের সঙ্গে কথা বলেন লিওন নামের একজন মানুষ। তিনি জলদস্যুদের পক্ষে দরকষাকষি করছিলেন।
জলদস্যুরা ৯ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করেছিল।
মুক্তির শর্তাবলি নিয়ে আলোচনার সময় সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
২৪ ডিসেম্বর জাহাজের ক্যাপ্টেন ফরিদ আহমেদ জাহাজের ব্যবস্থাপক মেহেরুল করিমকে ফোন করেন।
তিনি জানান, পরিস্থিতি ভয়াবহ। জাহাজের বিশুদ্ধ খাবার পানি ও জ্বালানি শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এরপর দুই মাস ধরে আলোচনা চলে।
২২ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত মুক্তিপণ নির্ধারণ করা হয়। এরপর জাহাজের কর্মকর্তারা জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্তির বিষয়ে লিখিত নিশ্চয়তা পান।
মুক্তিপণ হস্তান্তর
১২ মার্চ এমভি জাহান মনিতে দুটি বিশেষভাবে জলরোধী স্যুটকেস পাঠানো হয়।
স্যুটকেসগুলো দেখে জলদস্যুরা আনন্দে চিৎকার করে উঠেছিল।
স্যুটকেস দুটি একশ' ডলারের নোটের বান্ডিলে পূর্ণ ছিল। নাবিকরাও তাদের জীবনে এত পরিমাণ অর্থ দেখেনি।
জলদস্যুরা এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করেনি। তারা সাবধানে টাকা গুনে ও যাচাই করে নিয়েছিল।
তাদেরকে মুক্তিপণের জন্য ৪.৬২ মিলিয়ন ডলার এবং জ্বালানির খরচ বাবদ ১ লাখ ডলার বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এরপর জলদস্যুরা দ্রুত আলোচকদের কাছে সংকেত পাঠায় যে মুক্তিপণ গ্রহণযোগ্য।
তবে এসআর শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এমভি জাহান মনির মালিক মুক্তিপণ পরিশোধের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
শেষকথা
অবশেষে ১৩ মার্চ ভোরে প্রায় ১০০ দিন জলদস্যুদের আস্তানায় বন্দি থাকার পর জাহাজের নাবিকেরা মুক্তি পায়।