মুক্তিপণ না পেলে মেরে ফেলা হবে, শুনুন জাহাজের এক ক্রুর আকুতি
'এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলবে।'
কথাগুলো ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ-তে থাকা এক কর্মীর। তার নাম উদ্দিন মোহাম্মাদ নুর।
গতকাল মঙ্গলবার জিম্মি জাহাজটি থেকে নুর এ বার্তা তার স্ত্রীকে পাঠিয়েছেন। পরে তার স্ত্রী বার্তাটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পাঠান।
বাংলাদেশি জাহাজটির প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ খানের স্ত্রী মীনা আজমিনও বার্তাটি পেয়েছেন।
অডিও বার্তাটি প্রথমে আতিক উল্লাহ খানের বলে প্রথমে মনে করা হয়েছিল। পরে এটি নুরের গলার স্বর বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অডিও বার্তাটিতে নুরকে বলতে শোনা যায়, 'এই মেসেজটা সবাইকে পাস করে দিও। আমাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। ফাইনাল কথা হচ্ছে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলবে বলছে আর কি। এদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, এরা তত তাড়াতাড়ি আমাদের ছাড়বে বলছে। এ মেসেজটা সবদিকে পাস করে দিও। এখন মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে।'
আতিকের মা শাহনুুর বেগম বলেন, জলদস্যুরা ৫ মিলিয়ন ডলার অর্থ দাবি করেছেন।
আতিকের বাড়ি চন্দনাইশের বরকল এলাকায়। মা, ভাই, স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি থাকেন শহরের নন্দনকানন এলাকায়। ২০১৭ সালে আতিকের বাবা মারা যান। এর পর তিনিই সংসারের হাল ধরেন। তার ছোট ভাই এখনও পড়াশোনা করছেন। তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা।
আতিক ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এসআর শিপিংয়ে কর্মরত ছিলেন। গত ২৫ নভেম্বর তিনি এমভি আব্দুল্লাহ-তে যোগ দিয়েছিলেন।
জাহাজটির মালিক কেএসআরএম গ্রুপের উদ্দেশে দেওয়া আরেকটি অডিও বার্তায় আতিক উল্লাহ খানকে বলতে শোনা যায়, '৫০ জন জলদস্যু আমাদের ঘিরে রেখেছে। তারা এখনও আমাদের কোনো ক্ষতি করেনি। কিন্তু আমাদের বিভিন্নভাবে ভয় দেখাচ্ছে।
তিনি বলেন, 'আমাদের জাহাজে ২০–২৫ দিনের রসদ (খাবার) আছে। ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি আছে। আর জাহাজে রয়েছে ৫৫ হাজার টন কয়লা।' রসদ যাতে দ্রুত ফুরিয়ে না যায়, সে জন্য অপ্রয়োজনে ব্যবহার না করার জন্য সবাইকে জানানো হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে জাহাজে থাকা নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
গতকাল দুপুর ১ টা ৪০ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপে আরেকটি বার্তা পাঠান জিম্মি ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন। তিনি লিখেন, 'প্লিজ আমাদের বাঁচান। সোমালিয়ান জলদস্যুরা আমাদের জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ওপর চড়াও হয়েছে। তাদের হাতে রয়েছে ভারি অস্ত্রশস্ত্র'।
গতকাল বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। জলদস্যুদের কবলে পড়া চট্টগ্রামের কেএসআরএম গ্রুপের এই জাহাজটি পরিচালনা করছে গ্রুপটির সহযোগী সংস্থা এসআর শিপিং লিমিটেড।
জাহাজে আতিক উল্লাহসহ ২৩ বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন। তাদের জিম্মি হওয়ার খবরে স্বজনদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ছিনতাই হওয়া জাহাজ এবং এর ক্রুদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
কেএসআরএম গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহরিয়ার জাহান রাহাত দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, যোগাযোগ প্রক্রিয়া শুরু হলে জাহাজে থাকা ২৩ নাবিককে উদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে কেএসআরএম।