ডলার ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে মারাত্মক সংকটে ইস্পাত শিল্প: উদ্যোক্তারা
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, ডলার, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের ইস্পাত শিল্প মারাত্মক সংকটের মুখে পড়েছে।
এ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে দেশীয় ইস্পাত শিল্পকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে ছয় দফা দাবি পেশ করেন।
এক লিখিত বিবৃতিতে সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডলার সংকটের কারণে ইস্পাতের কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না। এতে ইস্পাতের কাঁচামাল কম আসছে এবং কাঁচামালের সরবরাহ চেইন ব্যাহত হচ্ছে।
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কাঁচামাল, রাসায়নিক, উপাদান (৮৫ শতাংশ আমদানি-নির্ভর), সুদের হার (৯ শতাংশ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ), জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস, এলসি কমিশন, মার্জিন, ডিসকাউন্টিং রেট এবং অন্যান্য চার্জের খরচ বেড়েছে। এতে চলতি মূলধনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বিদ্যুতের দাম গত বছর ১৫ শতাংশ বেড়েছে, এ বছর আরও ১০ শতাংশ বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে বলে জানা গেছে। ডিমান্ড চার্জও ২০ শতাংশ বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, গ্যাসের দাম প্রায় তিনগুণ বেড়েছে, উৎপাদন খরচ প্রতি টনে তিন টাকা বেড়েছে।
অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেন, বর্তমান ২ শতাংশ উৎসকর কর্তন মাত্রাতিরিক্ত এবং ইস্পাত খাতের প্রকৃত মুনাফার সঙ্গে এর সামাঞ্জস্য নেই। এ ন্যূনতম করের কারণে উৎপাদনকারীরা লাভ ছাড়া আয়কর দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া আমদানিকৃত স্ক্র্যাপের ওপর টন প্রতি ন্যূনতম অগ্রিম আয়কর ৫০০ টাকা সমন্বয় এবং ফেরতযোগ্য নয়।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশন ডলারের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে ৪০ শতাংশ চলতি মূলধনের ঘাটতিতে থাকা দেশীয় ইস্পাত শিল্পকে রক্ষার জন্য ৬ দফা দাবি পেশ করে।
দাবিগুলো হচ্ছে:
১| চলতি মূলধনের ঘাটতি মেটাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে (১২ বছর পর্যন্ত) রূপান্তর করা।
২| ইস্পাত খাতের জন্য এলসি সুবিধা ৫০ শতাংশে উন্নীত করা।
৩| ইস্পাত শিল্পের জন্য ব্যাংকে গ্রাহক ঋণসীমা গণনার ক্ষেত্রে বর্তমান ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ হারে নন-ফান্ডেড দায় গণনার বিষয় বিবেচনা করা।
৪| ভারী শিল্প পর্যায়ে বিদ্যুতের ডিমান্ড চার্জের ক্ষেত্রে যে ন্যূনতম চার্জ বৃদ্ধি করা হয়েছে তা বৃদ্ধি না করা।
৫| ইস্পাত খাতের জন্য উৎসে কর কর্তন ২ শতাংশের পরিবর্তে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা। ইস্পাতের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের জন্য আমদানি পর্যায়ে ন্যূনতম অগ্রিম আয়কর টনপ্রতি ৫০০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা নির্ধারণ করা।
৬| শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিএম সনদ ফি বৃদ্ধি সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপন বাতিল করা এবং সিএম সনদ ফি টার্নওভারের ভিত্তিতে নির্ধারণ না করে নির্দিষ্ট করে দেওয়া।
আনোয়ার গ্রুপ, বিএসআরএম, সালাম স্টিলসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত শিল্পের নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।