এবার ভরদুপুরে বান্দরবানের থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি
এবার ভরদুপুরে বান্দরবানের থানচি বাজারে গুলি চালিয়ে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
আজ বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন থানচি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন। দুপুর দেড়টার দিকে তিনি বলেন, "আমরা ঘটনা শুনেছি। ঘটনাস্থলে যাচ্ছি, পৌঁছে বিস্তারিত জানাতে পারব।"
এর আগে, গতকাল (২ এপ্রিল) রাতে বান্দরবানে সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখায় হামলা চালায় ডাকাতরা। লুটপাটের পাশাপাশি ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকেও অপহরণ করে তারা।
স্থানীয়রা জানান, সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে থানচি বাজার ঘিরে ফেলে ডাকাতরা। তারা ব্যাংক ও এর আশপাশের এলাকায় অস্ত্রের মুখে সবার কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এরপর তারা ব্যাংক দুটির ভেতরে ঢুকে পড়ে।
ডাকাতরা কৃষি ব্যাংক থানচি শাখা থেকে আড়াই লাখ টাকা লুট করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হ্লাসুইথোয়াই মারমা।
এছাড়া, থানচি শাখার সোনালী ব্যাংক থেকে ডাকাতরা ১৫ লাখ টাকা লুট করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ব্যাংকটির বান্দরবান জেলার ডিজিএম বান্দরবান মো. ওসমান গণি। তবে গতকাল রাতে সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখা থেকে কত টাকা লুট হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা।
থানচি কৃষি ব্যাংক শাখার ম্যানেজার হ্লাসুইথোয়াই মারমা জানান, "বুধবার দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ দুই জিপ গাড়ি ভর্তি লোকজন আসে। হঠাৎ করে কৃষি ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকে ঢুকে পড়ে। আমাদের কৃষি ব্যাংকের ভেতর কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের আলাদা এক রুমে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। পরে তারা কাগজপত্র এলোমেলো করে চলে যায়।"
ব্যাংকে টাকা তুলতে যাওয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, ডাকাতরা পাঁচ মিনিটের মতো ব্যাংকের ভেতরে ছিল। এই সময়ের মধ্যেই তারা গুলি চালিয়ে ভীতি সৃষ্টি করে সব টাকা লুট করে নিয়ে চলে যায়।
সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম ওসমান গণি বলেন, "গতকাল রাতে রুমার সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা শুনে আজ সকালে আমরা ব্রাঞ্চে এসেছি। এরমধ্যে আজ দুপুরে আবার থানচি ব্রাঞ্চে ডাকাতদের হানা দেওয়ার ঘটনা শুনতে পাচ্ছি। আমরা খোঁজ রাখছি। আমাদের সাথে প্রশাসনের লোকজনও ঘটনাস্থলে রয়েছেন।"
এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রুমা উপজেলা প্রশাসন ভবনে হামলা চালায় সশস্ত্র ব্যক্তিরা। পরে সোনালি ব্যাংকের শাখায় হামলা চালানো হয়। সে সময় ব্যাংকে আসা নতুন টাকা লুটের পাশাপাশি ম্যানেজার মো. নেজাম উদ্দিনকেও অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
এই বিষয়ে রুমা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, "উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।"
রুমা উপজেলারি দায়িত্বপ্রাপ্ত এসি (ল্যান্ড) দিদারুল আলম বলেন, "গত রাত সাড়ে ৮টার দিকে ৭০-৮০ জনের একদল দুবৃর্ত্ত উপজেলা কমপ্লেক্সের বাউন্ডারির ভেতর মসজিদে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। তখন তারাবি নামাজের জন্য অনেক কর্মকর্তা সেখানে ছিলেন। শুরুতেই নামাজি সবাইকে বন্দি করে সন্ত্রাসীরা প্রচণ্ড মারধর করে। সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা অস্ত্র হাতে ব্যাংক ম্যানেজারকে জিম্মি করে ব্যাংকে নিয়ে যায় এবং লকার খুলিয়ে ব্যাংক লুট করে।"
সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর (পুলিশ ও আানসার ভিডিপির) অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করেছে। তারা পুলিশের দুটি এসএমজি ও ৬০ রাউন্ড গুলি, আটটি চীনা রাইফেল ও ৩২০ রাউন্ড গুলি ও আনসারের চারটি শর্টগান ও ৩৫ রাউন্ড গুলি লুট করে। দুর্বৃত্তরা পাহাড়ের নতুন সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিনের সদস্য বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ঘটনায় জেলার পুলিশ সুপার সৈকত সাহিন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুমা সার্কেল মো. জুনায়েদ রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংক পরিদর্শন করেছেন।