সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজামকে চোখ বেঁধে মাইলের পর মাইল হাঁটানো হয়: স্ত্রী মাইসুরা
বান্দরবানের রুমা শাখার সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অপহরণের পর চোখ বেঁধে কয়েক ঘণ্টা হাঁটিয়ে নির্জন পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ কারণে তার পা ফুলে গেছে এবং তিনি পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে কথাগুলো বলছিলেন নেজাম উদ্দীনের স্ত্রী মাইসুরা ইসফাত।
গত মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) পাহাড়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখায় আক্রমণ করে নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে।
অপহরণের প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
মাইসুরা জানান, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নেজামকে হাসিখুশি দেখা গেলেও শারীরিকভাবে তিনি খুবই দুর্বল। মানসিকভাবে ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। কারো সাথে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই তিনি।
স্বামীর বরাত দিয়ে মাইসুরা বলেন, 'নেজামকে অপহরণের পর পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছে তার চোখ বেঁধে ফেলা হয়। এরপর দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা তাকে পাহাড়ের ঝিরিপথে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এক সময় তারা নেজামের চোখ খুলে দেয়। অন্ধকারে চলার সুবিধার্থে তাকে একটি বাটন ফোনও দেওয়া হয়। সে ক্লান্ত হয়ে পড়ায় কিছু সময়ের জন্য বিশ্রামের সুযোগও দিয়েছিল তারা। এরপর আবার তাকে হাঁটিয়ে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে ঘুমানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।'
তিনি বলেন, 'বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নাস্তা খাইয়ে নেজামকে আবারও হাঁটিয়ে আরেকটি পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আগে থেকেই প্রায় ৩০-৩৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী অবস্থান করছিল। তারা কলা পাতায় নেজামকে ভাত, ডাল ও ডিম ভাজি খেতে দেয়। খাওয়া শেষে সেখান থেকে হাঁটিয়ে আরেকটি পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়।'
অপহরণকারীরা সবসময় নিজেদের মধ্যে বম ভাষায় কথা বললেও নেজামের সঙ্গে শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলেছে এবং ভালো আচরণ করেছে বলে জানান মাইসুরা ইসফাত। তিনি জানান, পুরো সময়টায় ১০-১২ সশস্ত্র ব্যক্তি নেজামকে পাহারা দেওয়ায় সে প্রচণ্ড চাপের মুখে ছিল।
এরপর বুধবার রাত ৮টার দিকে অপহরণকারীরা নেজামকে একটি টং ঘরে নিয়ে রাতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দেয়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত তারা নেজাকে সেখানেই আটকে রাখে। পরে প্রায় এক ঘণ্টা হাঁটিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঘণ্টাখানেক পর মোটরসাইকেলে করে আরেকটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। এর মাঝে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলারও সুযোগ দেওয়া হয় নেজামকে।
মাইসুরা বলেন, নেজামকে অপহরণের খবরে আমি পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম তাকে আমি হারিয়েই ফেলেছি। তার সাথে কথা বলার পর মনে সাহস আসে। সৃষ্টিকর্তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা সবার সহযোগিতায় আমি তাকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেয়েছি।
১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নেজামকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে কেএনএফ।