বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক জ্বালানি থেকে উত্তরণে জটিল সন্ধিক্ষণের মুখোমুখি: প্রতিবেদন
বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক জ্বালানি থেকে উত্তরণের পথে জটিল সন্ধিক্ষণের মুখোমুখি অবস্থান করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে গ্লোবাল এনার্জি মনিটর প্রকাশিত ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে।
প্রতিবছরের মতো এবারও গত ১১ এপ্রিল গ্লোবাল এনার্জি মনিটর এবং অংশীদারদের কনসোর্টিয়াম বুম অ্যান্ড বাস্ট কোল এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশের কয়লা শক্তির ল্যান্ডস্কেপের ওপর আলোকপাত করে, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবারের প্রতিবেদনে।
বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ওঠানামার মধ্যে আমদানি করা কয়লার ওপর বাংলাদেশের অধিক নির্ভরশীলতা দেশের জন্য অর্থনৈতিক বোঝা তৈরি করছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
এছাড়া, বাংলাদেশে কয়লার অধিক ব্যবহার নিয়েও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশের কয়লা ধারণক্ষমতা ১.৯ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে, যা ২০০৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে রেকর্ড সর্বোচ্চ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'কয়লাভিত্তিক প্ল্যান্টের এই বৃদ্ধি সত্ত্বেও, জ্বালানি ঘাটতির কারণে ইনস্টল করা ক্ষমতার বেশির ভাগই অব্যবহৃত রয়ে গেছে। সম্প্রতি জ্বালানির অভাবে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিভিন্ন সময়ে বন্ধ ছিল।'
গ্লোবাল এনার্জি মনিটরের কয়লা প্রোগ্রামের ডিরেক্টর ফ্লোরা শ্যাম্পেনোস বলেন, এ বছর কয়লা ভিত্তিক প্ল্যান্ট স্থাপনে তেমন সম্প্রসারণ দেখা যায়নি। যেসব দেশে কয়লা প্ল্যান্টগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেসব দেশে এ সিদ্ধন্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি। আর যেসব দেশে নতুন কয়লা প্ল্যান্ট তৈরির পরিকল্পনা চলছে, তাদের অবশ্যই এ পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসা উচিত।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৯ সাল থেকে প্রস্তাবিত কয়লা ক্ষমতায় হ্রাসের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা ধীরে ধীরে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উৎসের দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)- এর সদস্য সচিব এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কয়লা আমদানির সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থপ্রদান, জ্বালানি খরচ এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ওঠানামার কারণে বর্তমানে সমস্যার সম্মুখীন।
"এমনকি বাংলাদেশের পক্ষে বিদ্যমান কয়লা প্ল্যান্টগুলোকেও পূর্ণ ক্ষমতায় পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় নতুন কয়লা প্ল্যান্ট নির্মাণের উদ্যোগ যুক্তিসঙ্গত নয়; এছাড়া পুরোনো প্ল্যান্টগুলো চালু রাখার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে এবং এগুলো জলবায়ুকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে," যোগ করেন তিনি।
প্রতিবেদনে কয়লাভিত্তিক জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে কাজ করেছে– সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ), ইথ্রিজি, রিক্লেইম ফাইন্যান্স, সিয়েরা ক্লাব, সোলুশন ফর আওয়ার ক্লাইমেট, কিকো নেটওয়ার্ক, ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (সিএএন) ইউরোপ, বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এক্সটারনাল ডেব্ট (বিডব্লিউজিইডি) কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন), ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), ট্রেন্ড এশিয়া, অ্যালায়েন্স ফর ক্লাইমেট জাসি্টস অ্যান্ড ক্লিন এনার্জি, চাইল সাসটেনটেবল, পলেন ট্রানজিসিওনস জাসটাস, ইনিসিএটিভা ক্লাইমেটিকা ডি মেক্সিকো, আরায়ারা, এবং বেয়ন্ড ফসিল ফুয়েল।