পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সভায় এমআরটি-৫ প্রকল্পের ব্যয় কমানোর প্রস্তাব
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার মধ্য দিয়ে ঢাকা মেট্রো লাইন-৫ সাউদার্ন রুট প্রকল্পের বেশ কিছু অংশের ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গাবতলী থেকে আফতাব নগর পর্যন্ত ১৭.২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল লাইনটি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর অর্থায়নে প্রজেক্ট রেডিনেস ফাইন্যান্সিং (পিআরএফ) স্কিমের অধীনে নির্মিত হবে যার প্রকল্প ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল ৫৪ হাজার ৬শ ১৯ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রকল্প ব্যয় যৌক্তিক করতে সম্মত হয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের কিছু অংশের জন্য উচ্চ মূল্য হিসেব করা হলেও তা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে।
উদাহরণস্বরূপ, এ রুটের জন্য বিস্তারিত প্রকৌশল নকশা প্রণয়ন করা সত্ত্বেও এ প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৭শ ৬৯ কোটি টাকার পরামর্শক ব্যয় নিয়ে সভায় আলোচনা হয়। এছাড়া জমি অধিগ্রহণ, গাড়ি ক্রয় এবং কর্মকর্তাদের সম্মানী ভাতা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সভায় প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের ব্যয়ের প্রস্তাবের পেছনে যৌক্তিকতা নিয়ে আলাপ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
তিনি আরো বলেন, "এইসব ব্যয় প্রস্তাব পর্যালোচনা ও যৌক্তিকীকরণের বিষয়ে একমত হয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। প্রকল্প প্রস্তাব পুনর্গঠন করে আবারো পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।"
প্রকল্প পরিচালক আব্দুল ওহাব টিবিএসকে জানিয়েছেন, সর্বশেষ পর্যালোচনার পর জানা যাবে প্রকল্পের ব্যয় কত হবে। তবে কিছু অংশের ব্যয় কমার পাশাপাশি কিছু অংশের ব্যয় বাড়তেও পারে।
তিনি বলেন, "দাপ্তরিক কাজ শেষ হলে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) কাছে উপস্থাপন করা হবে।"
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রকল্পটির কাজ ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ২.৩ বিলিয়ন ডলার এবং কোরিয়া ১.৩ বিলিয়ন ডলার সহ মোট ৩.৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিবে।
যেসব অংশের খরচ কমতে পারে
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ১৩৮.৫৫১ হেক্টর বা ৩৪২ একরের অধিক ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৭১৬.৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পে চারটি স্টেশন প্লাজা নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন স্টেশন প্লাজার বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করে ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ যৌক্তিক পর্যায়ে কমানোর মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় সংকুচিত করতে পরামর্শ দিয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ৫৮টি যানবাহন (২৩টি জিপ, ১৫টি পিকআপ, ১৪টি মাইক্রোবাস ও ৬টি মোটরসাইকেল) ভাড়া বাবদ ৯৮.৪৫ কোটি টাকা খরচ হওয়ার বিষয়টি পুনরায় পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে রোলিং স্টক ও ডিপোর সরঞ্জাম বাবদ ৩৬০০ কোটি টাকা, মেইন লাইনে সিভিল ও স্টেশনের কাজ এবং ডিপোতে সিভিল ও বিল্ডিং ওয়ার্ক খাতে ২০,৬৩৭ কোটি টাকা এবং ইলেকট্রিক্যাল এন্ড মেকানিক্যাল (ইএন্ডএম) খাতে ১১,৯৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব পর্যালোচনা করার ব্যাপারে সভায় আলোচনা হয়েছে।
কমিশন সভায় আরো জানিয়েছে, এডিবির ঋণের প্রতিশ্রুতি চার্জের জন্য রিজার্ভ বাবদ ২০৩.৫ কোটি টাকা (১৮.৭৫ মিলিয়ন ডলার) এবং বিদেশি ঋণের সুদ (নির্মাণের সময় সুদ) বাবদ ৫৮৪৬.৭৪ কোটি টাকা (৫৩৮.৭১ মিলিয়ন ডলার) প্রকল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ না হওয়ায় সেগুলো প্রস্তাবিত প্রকল্পে যোগ করাটা অযৌক্তিক।
এছাড়া কর্মকর্তাদের সম্মানী বাবদ ২.৫২ কোটি টাকা, সেমিনার/সম্মেলনের জন্য ৫ কোটি টাকা, প্রশিক্ষণের জন্য (বিদেশি ও স্থানীয়) ৩ কোটি টাকা, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৯.৬৬ কোটি টাকা, টেলেক্স/ফ্যাক্স/ইন্টারনেটের জন্য ১.৮৬ কোটি টাকা, আইনি খরচ বাবদ ৫ কোটি টাকা, বিজ্ঞাপন ও প্রচারের জন্য ২.৩২ কোটি টাকা এবং অফিস স্টেশনারি জন্য ১.৬২ কোটি টাকা সহ বিভিন্ন ব্যয় নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়েছে।