গরমে শিশুর যত্নে যা করবেন, যা করবেন না
প্রচণ্ড তাপদাহে বয়স এবং অন্যান্য প্যারামিটার বিবেচনায় যে কয়েকটি শ্রেণীর মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে তাদের মধ্যে শিশুরা অন্যতম। এর প্রধান দুটো কারণ হলো— শিশুদের শরীরে তুলনামূলক পানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় ঘামজনিত পানিশূন্যতার প্রভাব বেশি হয় এবং শিশুরা তাদের খাবার ও পানীয়ের জন্য বড়দের উপর নির্ভরশীল। সেই সাথে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার মৌসুমি জলবায়ু বাড়তি সমস্যা তৈরি করে; গরমকালে আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় প্রচুর ঘাম হয়।
এ গরম এবং ঘামের জন্য সরাসরি আক্রান্ত হয় শরীরের পানি, লবণ ও তাপমাত্রার ভারসাম্য। প্রভাব পড়ে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক সহ অন্যান্য অঙ্গের। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় যা সামাল দেয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ছে আর্থসামাজিক এবং জাতীয় জীবনে।
গ্রীষ্মকাল মাত্র শুরু যা স্থায়ী থাকবে আরো ছয় থেকে সাত মাস। তাই আসুন জেনে নেই এ গরমে শিশুর যত্নে যেসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
যা করণীয়
১. শিশুদের তাপের সরাসরি সংস্পর্শে যত নেওয়া যায়। ছাতা, ফুল স্লিভ বা সুতি ঢিলেঢালা জামাকাপড় পরে বাইরে নেওয়া। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না নেওয়া এবং গেলেও প্রখর রোদ এড়িয়ে যাওয়া।
২. দুপুর শিফটের স্কুলগুলোকে সম্ভব হলে মর্নিং শিফটে স্থানান্তর করা।
৩. বাইরে থেকে এসে প্রথমে ঘাম মুছে শরীরকে কক্ষ তাপমাত্রায় আনা। তারপর ফ্যান চালিয়ে শরীর ঠান্ডা করা অথবা গোসল কিংবা গা মুছে ফেলা।
৪. পর্যাপ্ত তরল ও পানি পান করা। এটা বিভিন্ন বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিভিন্নরকম। যেমন এক বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বুকের দুধেই প্রয়োজনীয় পানি থাকে। ১-৩ বছরের বাচ্চাদের সব খাবারের সাথে আলাদা পানি দিতে হবে। ৩ বছরের পর থেকে আলাদাভাবে হিসেব করে পানি দিতে হবে।
৫. পানির পাশাপাশি তাজা রসালো ফল এবং চিনিবিহীন তাজা ফলের রস, দই থেকে তৈরি বিভিন্ন উপকরণ যেমন লাচ্ছি, ফ্রুট সালাদ, ফালুদা এসবের কোনো একটা দিতে হবে। সবকিছুই যেন ঘরে তৈরি করা হয়।
৬. সাধারণত বাচ্চারা একেবারে অনেকটা খেতে পারে না। তাই তাদেরকে অল্প করে বারবার তরল খাবার দিতে হবে। সারাদিনের ৫টি খাবারের মধ্যে একটি যেন ৫ নাম্বারে উল্লিখিত কিছু হয়।
৭. ঘরের তাপমাত্রা কমিয়ে রাখার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বাচ্চা যদি ঠান্ডা, অ্যালার্জি বা অ্যাজমায় আক্রান্ত না হয় অথবা এয়ার কণ্ডিশনারের প্রতি সংবেদনশীল না হয় তাহলে অবশ্যই এসি চালানো যাবে। কিন্তু তা যেন সার্বক্ষণিক না হয়।
যা করা যাবে না
১. বেশি ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার পরিহার করতে হবে। যেমন তৈলাক্ত ও চর্বিজাতীয় খাবার, ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার।
২. টেষ্টিস্যালাইন, ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক, কার্বোনেটেড বেভারেজ ইত্যাদি বাণিজ্যিক পণ্য একেবারেই খাওয়া যাবে না। এগুলো কখনোই খাওয়া উচিত না।
৩. বাইরে থেকে এসে ঘর্মাক্ত অবস্থায় সাথে সাথেই গোসল বা এসি চালিয়ে ঠান্ডা হওয়া যাবে না। আগে ঘাম মুছে ফ্যান চালিয়ে শরীরকে ধীরে ধীরে ঠান্ডা করতে হবে।
৪.অতিরিক্ত ঠান্ডা পানীয়, বরফ, আইসক্রিম, রাস্তার খোলা আখের রস বা ফলের রস বা শরবত সম্পূর্ণ নিষেধ।
৫. শ্রেণীকক্ষের বাইরে স্কুলের অন্যান্য অতিরিক্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বাতিল করতে হবে।
৬. ঘামাচি পাউডার বা অন্যান্য পাউডার ব্যবহার করা যাবে না। এতে লোমকূপ বন্ধ হয়ে ঘাম নি:সরণে বাধা দেয়। মনে রাখতে হবে, ঘাম একটা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
লক্ষ্য রাখতে হবে
১. বাচ্চার প্রস্রাবের মাত্রা ও পরিমাণ ঠিক আছে কিনা। প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়ে যাচ্ছে কিনা।
২. বাচ্চার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে কিনা।
৩. চামড়ায় কোনো দানা বা ফুসকুড়ি হচ্ছে কিনা।
৪. পানিশূন্যতা বা তাপদাহের জন্য গা গরম হতে পারে। তাই এটাকে জ্বর ভাবা যাবে না।
৫. উপরে উল্লিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করেও যদি তাপমাত্রা না কমে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. খন্দকার মোবাশ্বের আহমেদ: সহকারী অধ্যাপক (পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি এন্ড নিউট্রিশন); নবজাতক, শিশু কিশোর, শিশু পুষ্টি ও শিশু গ্যাস্ট্রোলিভার বিশেষজ্ঞ