পরিবহন-যোগাযোগ খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা সরকারের
সরকার সড়ক, রেল, সেতু, শিপিং, বেসামরিক বিমান চলাচল এবং টেলিযোগাযোগের মতো মূল খাতে সরকারি বিনিয়োগ যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
'মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬)' অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯৬ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এক হাজার ৬৩০ কোটি টাকায় উন্নীত হবে।
চলতি অর্থবছরে ৮৭ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পর বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচিতে অর্থায়ন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
নীতি নথিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং সামাজিক সংহতি নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত ও ব্যয়সাশ্রয়ী পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। এটি বলছে, মসৃণ সরবরাহ শৃঙ্খলা পরিচালনার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী কার্যকরভাবে প্রতিযোগিতা করার জন্য একটি দক্ষ পরিবহন এবং লজিস্টিক ব্যবস্থা অপরিহার্য।
বিশেষ করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বহুলেন মহাসড়ক নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও নতুন সেতু নির্মাণসহ উন্নত ও টেকসই সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
এই প্রচেষ্টাগুলো এক হাজার ১০০ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্তকরণ, এক হাজার ২৫০ কিলোমিটার মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং সাত হাজার ৩০০ মিটার সেতু ও কালভার্টসহ ৪৫০ কিলোমিটার মহাসড়ক পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনার পরিপূরক।
ঢাকা শহরে, সরকার মেট্রোরেল লাইন সম্প্রসারণ করে যানজট হ্রাসের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এটি নগরীর গতিশীলতার উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করতে প্রস্তুত।
রেলওয়ে খাতকে নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী, আধুনিক ও জনবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থায় পরিণত করার লক্ষ্যে ৩০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনার আওতায় সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে প্রতিটি জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা, রেলপথের মানোন্নয়ন এবং সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে ২৭৫ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ এবং ২১০ কিলোমিটার বিদ্যমান লাইন পুননির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
নথিটি নৌ পরিবহন ব্যবস্থার জন্য উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার রূপরেখা দেয় এবং সমন্বিত মাল্টি-মোডাল ট্রান্সপোর্ট ফ্রেমওয়ার্কের গুরুত্ব উল্লেখ করে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় নদীর নাব্যতা বজায় রাখতে উল্লেখযোগ্য ড্রেজিং প্রচেষ্টার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌপথ, সমুদ্রবন্দর এবং স্থলবন্দর বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই বিমান ভ্রমণের ক্রমবর্ধমান চাহিদার আলোকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় যাত্রী পরিচালনার ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিমানবন্দরগুলোতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য প্রকল্প গ্রহণ করছে। এই আধুনিকীকরণগুলো বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিবহনের আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার বৃহত্তর কৌশলের অংশ।
এই বিস্তৃত পরিকল্পনাগুলো কেবল বাংলাদেশের অবকাঠামো আধুনিকীকরণের লক্ষ্য নয়, বরং দেশের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর ভিত্তি হিসেবেও কাজ করে।