গাজীপুর ও মুন্সীগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫, আহত ১৩
শুক্রবার (৩ মে) দিবাগত রাত ও শনিবার (৪ মে) ভোরে মুন্সীগঞ্জ ও গাজীপুরে পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ঘটনা দুটিতে আহত হয়েছেন মোট ১৩ জন।
শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের বাউশিয়া এলাকায় কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় প্রাইভেটকার খাদে পড়ে একই পরিবারের ৩জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ২ জন।
নিহতরা হলেন— চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার কাদরা গ্রামের হোসেন আলী বেপারীর ছেলে আলমগীর হোসেন (৫৮), তার ছোট ছেলে জহিরুল ইসলাম (২৭) ও তার মামী রাহেলা বেগম (৫৫)।
আহতরা হলেন— আলমগীর হোসেনের বড় ছেলে নজরুল ইসলাম (৩০) ও প্রাইভেট কার চালক ইব্রাহিম খলিল সুজন (৩৩)।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার ডেমরা এলাকার বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসী আলমগীর হোসেন সম্প্রতি দেশে ফিরে শুক্রবার (৩ মে) পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় কাদরা গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বেড়ানো শেষ করে রাত সাড়ে দশটার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। এসময় তার মামী রাহেলা বেগমকে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে ঢাকাতে নিয়ে আসছিলেন তিনি।
পথিমধ্যে রাত দেড়টার দিকে তাদের প্রাইভেটকারটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের বাউশিয়া মানাবে ওয়াটার পার্কের সামনে আসলে পেছন থেকে একটি কাভার্ড ভ্যান প্রাইভেটকারটিকে ধাক্কা দিলে দিলে তা রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায়। এসময়ে আলমগীর হোসেনসহ ঘটনস্থলেই মারা যান ৩ জন। চালকসহ আহত ২ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
গজারিয়া ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ রিফাত মল্লিক বলেন, "রাত ১টা ৫০ মিনিটের দিকে আমরা দুর্ঘটনার খবর পাই। খবর পাওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করি। হতাহত সবাইকে উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।"
এ বিষয়ে গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির বলেন, "নিহতদের লাশ বর্তমানে পুলিশ ফাঁড়িতে রয়েছে। ঘাতক কাভার্ড ভ্যানটিকে শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।"
এদিকে, শনিবার ভোরে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকায় শ্রীপুর-মাওনা সড়কে শ্রমিকবাহী একটি পিকআপকে পেছন দিক থেকে একটি ড্রামট্রাক ধাক্কা দিলে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত হন। এ ঘটনায় আরও ১১ জন নির্মাণ শ্রমিক আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন— সুনামগঞ্জের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাসেল মিয়া (২৫) এবং আব্দুর রাজ্জাকের জামাতা আবু সুফিয়ান (২৫)।
শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার বেলাল আহমেদ বলেন, শনিবার (৪ মে) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে একটি পিকআপে করে নারী-পুরুষসহ ১৩ জন শ্রমিক একটি মিক্সার মেশিন নিয়ে ঢালাইয়ের কাজ করার জন্য শ্রীপুর থেকে মাওনা অভিমুখে যাচ্ছিলেন। পথে তাদের বহনকারী পিকআপটি শ্রীপুর-মাওনা আঞ্চলিক সড়কের ভাংনাহাটি এলাকায় কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে পৌঁছালে একই দিকে চলমান বেপরোয়া গতির একটি ড্রাম্প ট্রাক পেছন থেকে তাদের চাপা দেয়। এতে পিকআপ থাকা শ্রমিকরা কয়েকজন বিভিন্ন দিকে ছিটকে পড়েন ও কয়েকজন উল্টে যাওয়া মিক্সার মেশিনের নিচে চাপা পড়েন। পরে ঘটনাস্থলেই রাসেল মিয়া নিহত হন।
খবর পেয়ে শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে গুরুতর আহত ১২ জনকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু সুফিয়ান নামের আরেক শ্রমিককেও মৃত ঘোষণা করেন। বাকিরা চিকিৎসাধীন আছেন।
শ্রীপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কুদ্দুস বলেন, "নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ট্রাকটি ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা হয়েছে। তবে, চালক পালিয়ে গেছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।"