‘মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করতাম কখন বাবা আসবে, আজ ঠিকই বাবা ফিরে এসেছে’
আকাশি রঙের একই নকশার জামা পরে হাতে ফুল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ডে অধীর হয়ে বসে আছে ইয়াশরা ফাতেমা ও উনাইজা মেহবিন। সোমালি জলদস্যুদের জিম্মিদশা কাটিয়ে তাদের বাবা এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান ফিরছেন। তাদের চোখে বাবাকে দেখার আকুতি।
মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে [এনসিটি] ২৩ নাবিককে বহনকারী এমভি জাহান মনি ৩ যখন ভিড়ল, তাদের উচ্ছ্বাস যেন আর বাধ মানতে চাইছে না। বাবাকে দেখতেই হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাল ইয়াশরা ও উনাইজা।
আতিকুল্লা খান জাহাজ থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই দুই বোন দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে ফুল দিয়ে বরণ করল। নাবিক পিতাও কন্যাদের বুকে জড়িয়ে নিলেন। পিতার গালে চুমু দিলো দুই কন্যা। পিতাও চুমুতে ভরিয়ে দিলেন কন্যাদের। দীর্ঘদিন পর বাবাকে কাছে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ ফিরে পেয়েছে তারা।
বড় মেয়ে ইয়াশরা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলল, 'বাবা জলদস্যুদের কাছে জিম্মি বলে আমাদের ঈদটাও ভালোভাবে কাটাতে পারিনি। বাবার চিন্তায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করতাম কখন বাবা আসবে। আজ ঠিকই বাবা ফিরে এসেছে। আমরা ভীষণ খুশি।'
ইয়াশরা আরও বলে, 'আমার ছোটবোন বাসায়। তার এখনো দুই বছর বয়স। তাই তাকে এখানে আনা হয়নি। বাবাকে নিয়ে আমরা বেড়াব আর ঘুরব।'
আজকের এ দিনটির অপেক্ষায় ছিলেন জানিয়ে আতিক উল্লাহ খান বলেন, 'দুঃসহ সে স্মৃতির কথা আর মনে করতে চাই না। ট্রমা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। সন্তান, পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছি এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। এ আনন্দ প্রকাশের ভাষা নেই।'
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ডে মঙ্গলবার পুরো বিকেলটা কেটেছে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের স্বজনদের আবেগ আর সুখানুভূতির মধ্যে। স্বজনদের জড়িয়ে কোনো কোনো নাবিক কেঁদেছেন অঝোরে।
বিকেলে ৪টায় চট্টগ্রাম বন্দরে নাবিকদের নিয়ে আসা জাহাজ পৌঁছানোর পর তাদের বরণ করে নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রামের সিটি মেয়র, কেএসআরএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নাবিকদের স্বজনেরা। নাবিকদের সংবর্ধনা দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
গত ১২ মার্চ বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাওয়ার পথে ২৩ নাবিকসহ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে।
জলদস্যুদের মুক্তিপণ দেওয়ার পর ১৪ এপ্রিল ছাড়া পায় কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বার জলদস্যুদের হাতে বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ২০১০ সালে একই কোম্পানির এমভি জাহান মনি জাহাজ সোমালি জলদস্যুরা ছিনতাই করে। তখন জাহাজটিতে ২৫ জন ক্রু এবং ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ মোট ২৬ জন ছিলেন। মুক্তিপণ দিয়ে ১০০ দিন পর জাহাজসহ তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।