উপজেলার দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন চলছে
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৬৩ জেলার ১৫৬ উপজেলায় নির্বাচন আজ।
এই ধাপের নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার আনতে মরিয়া প্রার্থীরা; অন্যদিকে, ভোটারদের আগ্রহী করতে সব ধরনের প্রস্তুতিও নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে, প্রথম ধাপে দেড় দশকের মধ্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল সর্বনিম্ন। এই ধাপে ৮ মে ১৩৯ উপজলায় ভোট পড়ে মাত্র ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ।
সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনেও ভোটের হার কম (৪১ দশমিক ৮ শতাংশ) ছিল, এরপর আবার উপজেলার প্রথম ধাপের কম ভোট পড়ায়, নির্বাচনে ভোটারদের অনীহার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
যদিও দলীয়ভাবে না আসলেও এই নির্বাচনে শুধু ক্ষমতাসীন দলেরই সরব অংশগ্রহণ হয়। বিএনপিহীন নির্বাচনে, দলীয় প্রতীক না দিয়ে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যদিও প্রথম ধাপে অন্য কোনো দলের প্রার্থী তেমন ছিল না, এই ধাপেও নেই। ফলে ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা নিজেরাই নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন। এছাড়া, অনেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনেরাও প্রার্থী হয়েছেন।
প্রথম ধাপে কেন্দ্রে ভোটার আনতে ব্যর্থ হয়েছে প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশন।
প্রথম ধাপের ১৩৯টির মধ্যে ৬৩টি উপজেলায় তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। এসব উপজেলায় বিজয়ী প্রার্থীর সঙ্গে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের ব্যবধান ১০ হাজারের বেশি। প্রথম ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, এমন সংখ্যা নগণ্য। মাত্র ১৩টি উপজেলায় কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল।
নির্বাচন কমিশন বলছে ভালো প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ না নিলেও অনেক সময় ভোটাররা ভোট দিতে যান না। আবার ভোটার কম আসার কারণে তারা বিএনপিকেও দুষছেন।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, "নানান কারণে ভোটার আসতে চায় না। এর একটি বড় কারণ বিএনপি। ভোট বর্জন করায় তাদের কর্মী-সমর্থক কেন্দ্রে আসছেন না। আরেকটি বড় কারণ স্থানীয় নির্বাচনে ভোটাররা চাকরিস্থল থেকে ভোট দিতে আসতে চান না।"
এছাড়া, ধান কাটার মৌসুম, বৈরী আবহাওয়া ইত্যাদি কারণেও উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ১৫ বছর আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। এরপর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬১ শতাংশের মতো। আর ২০১৯ সালে প্রথমবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ। এবার প্রথম ধাপে ভোটের হার ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা সর্বনিম্ন।
তবে কান্ট্রি রিপোর্টের তথ্য মতে, এই ধাপে প্রার্থীরা কেন্দ্রে ভোটার নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নির্বাচন কমিশনও ভোটারদের আগ্রহী করতে ও নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে ব্যাপক প্রস্ততি নিয়েছে।
ইসি আলমগীর বলেন, "নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই। দ্বিতীয় ধাপের ভোট যাতে সুষ্ঠুভাবে হতে পারে, এজন্য ব্যাপক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন হয়েছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনেও তাই করেছি। কমিশনের দায়িত্ব নির্বাচন শান্তিপূর্ণ রাখা। তবে সারা বিশ্বেই ভোটারদের ভোটের প্রতি আগ্রহ কমছে।"
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই ধাপের ভোট উপলক্ষে সারাদেশে ৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ২৩ মে পর্যন্ত তারা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া, নির্বাচনে ৮৯ হাজার ৮৬৩ পুলিশ ও ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৮৭ আনসার সদস্য দায়িত্বে থাকবেন।
ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি নির্বাচনি অপরাধ দমনে মাঠে রয়েছেন ৬১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এদিকে, ভোটের আগের দিন দূরবর্তী কয়েকটি উপজেলার ৬৯৭টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, বাকি ১২ হাজার ৩২৩টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে আজ সকালে।
এই ধাপে মোট ১৩ হাজার ১৬ কেন্দ্রের ৯১ হাজার ৫৮৯ ভোট কক্ষে, ৩ কোটি ৫২ লাখ ৪ হাজার ৭৪৮ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।