ঘূর্ণিঝড় রিমাল নিম্নচাপ আকারে মানিকগঞ্জ অতিক্রম করছে
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় রিমাল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে সোমবার (২৭ মে) রাত ৮টার দিকে মানিকগঞ্জের কাছে অবস্থান করছে। তৎসংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টি ঝড়িয়ে এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হচ্ছে। ঝড়টি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'আগামীকাল দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হবে। চট্টগ্রামসহ কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।'
বেশকিছু এলাকায় বিপদ সংকেত নামিয়ে ফেলার পরেও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ব্যাপক ঝড়ের কারণ সম্পর্কে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়ের পশ্চাদ্ভাগ অতিক্রম করার সময় কিছু এলাকায় প্রবল ঝড় হয়েছে। এছাড়া গভীর নিম্নচাপটি যশোরে বিকাল পর্যন্ত একই স্থানে অবস্থান করায় বাতাসের গতিবেগ বেশি ছিল। ধীরে ধীরে বৃষ্টি ঝড়িয়ে এটি দুর্বল হয়ে পরবে।'
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, পায়রা, মোংলা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সোমবার (২৭ মে) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আজ দুপুর ৩টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় রিমালের কেন্দ্র রাজধানী ঢাকা অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সময় ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত হবে। তবে ধীরে ধীরে এটি দুর্বল হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র রাজধানী ঢাকার ওপর দিয়ে গেলেও তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। সামান্য বৃষ্টিপাত হবে। সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৫৯ কিলোমিটার। ভোর থেকে ঢাকায় ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, আগামীকাল ঢাকার আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমাল রোববার (২৬ মে) রাত ৮টার দিকে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে। রাত ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে আরম্ভ করে। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় জলোচ্ছ্বাসের।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ সারা দেশেই বৃষ্টি হচ্ছে।
রাত ৮টা ৩৩ মিনিট
সাগর উত্তাল থাকায় বন্দরের জেটিতে একটি জাহাজও ভেড়ানো যায়নি
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে আজ সোমবার সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে একটি জাহাজও ভেড়ানো যায়নি। তবে এখন শুধু বন্দর চত্বর থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম চলছে।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে রবিবার (২৬ মে) সকালের জোয়ারে জেটি থেকে ১৯টি জাহাজ গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও পণ্য খালাস বন্ধ করে ৪৯ টি খোলা পণ্যবাহী জাহাজ সাগরে পাঠানো হয়েছিল। এতে বন্দর জেটি ফাঁকা হয়ে যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে আজ সোমবার সকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে দেওয়া ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত প্রত্যাহার করা হয়। এর পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এ ঘোষণার পর সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রত্যাহার করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ৩টার জোয়ারে সাগর থেকে ১৯টি জাহাজ জেটিতে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে কর্ণফুলী নদী ও সাগরে প্রচণ্ড ঢেউ থাকায় বন্দরের পাইলটরা সাগরে নোঙর করে রাখা জাহাজে যাওয়ার সুযোগ পাননি। ঝুঁকি বিবেচনায় একটি জাহাজও জেটিতে আনা যায়নি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, 'বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর থেকে কোনো জাহাজ জেটিতে আনা যায়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী জোয়ারের সময় জাহাজ ফেরত আনা হবে। বন্দর ইয়ার্ড থেকে পণ্য ডেলিভারি দেওয়া শুরু হয়েছে।'
রাত ৮টা ১০মিনিট
ভবনের ছাদ ধসে স্কুল শিক্ষার্থী নিহত
আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আজ দুপুর ১১টার দিকে একটি স্কুলের নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন এক শিক্ষক।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম সাইফুল ইসলাম সাগর (১০)। সে নগরীর শাকতলা এলাকার অলি হাসানের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল বাহার জানান, নিহত শিক্ষার্থী নোয়াগাঁও চৌমুহনী এলাকার নূর আইডিয়াল স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্র। ওই স্কুলটি টিনশেডের। স্কুলটির পাশের একটি সাততলা ভবনের কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় সেই ভবনের ছাদের কিছু অংশ স্কুলের ওপর ধসে পড়ে। এতে চাপা পড়ে ওই শিক্ষার্থী মারা যায়। আর ক্লাসে থাকা এক শিক্ষক আহত হন।
সাগরের বাবা অলি হাসান জানান, আমার দুই ছেলের মধ্যে সাগর বড়। ভবন নির্মাণে অনিয়ম এবং খারাপ আবহাওয়ায় স্কুল খোলা রাখায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমি এর বিচার চাই।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দক্ষিণ সার্কেল) এমরানুল হোসেন মারুফ জানান, ভবন মালিকদের অবহেলায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিট
ঘূর্ণিঝড় রিমাল: ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৩৭ লাখ মানুষ, ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়াও ১৯ জেলায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আজ সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিনি এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী জানান, এসব জেলার ১০৭টি উপজেলা ও ৯১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার ৩৫ হাজার ৪৮৩টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ১০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর জেলায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি জেলায় নগদ সহায়তার ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য কেনার জন্য এক কোটি ৫০ লাখ টাকা, গোখাদ্য কেনার জন্য এক কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় সতর্কতার পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ৯ হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। গরু, মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬। এ ছাড়া দুর্গত মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে ১ হাজার ৪৭১টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।
রিমালের প্রভাবে ১৯ উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ১৯টি উপজেলায় উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সোমবার (২৭ মে) রাজধানীর নির্বাচন কমিশন ভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে তৃতীয় ধাপে ২৯ তারিখে ১০৯টি উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর ও বাহিনীগুলো প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছিল। কিন্তু গতকাল (২৬ মে) রাত থেকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আঘাত হেনেছে।
'স্থানীয় প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মোতাবেক যেসব নির্বাচনী এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের পানি প্রবেশ করেছে, বাঁধ ভেঙেছে, কোথাও গাছপালা ভেঙে পড়েছে, কোনো কোনো জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে—এমন ১৯ টি উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করা হলো।'
যেসব উপজেলার ভোট স্থগিত করা হয়েছে, সেগুলো হলো—লবাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, মোংলা, খুলনা জেলার কয়রা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, পটুয়াখালী সদর, দুমকী, মির্জাগঞ্জ, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, ভোলার তজুমদ্দিন, লালমোহন, ঝালকাঠির রাজাপুর, কাঠালিয়া এবং বরগুনার বামনা ও পাথরঘাটা।
ইসি সচিব বলেন, এসব উপজেলায় ভোটগ্রহণের বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।
বেলা ১২টা ৩৫ মিনিট
চট্টগ্রাম বন্দরে ফেরত আনা হচ্ছে জাহাজ, শুরু হচ্ছে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব কমে আসায় চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ফেরত আনার উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আজ (সোমবার) জোয়ারের সময় গভীর সাগরে ফেরত পাঠানো ১৯টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ফেরত আনা হবে। এছাড়া পণ্য খালাস বন্ধ করে গভীর সাগরে ফেরত পাঠানো ৪৯টি খোলা পণ্যবাহী জাহাজকেও বহিনোঙ্গরে ফেরত আনা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের মেরিন ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ওয়েদার সিগন্যাল ৩-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে বন্দর নিজস্ব সতর্কতা অ্যালার্ট ৪ প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাইলটরা জাহাজ ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। শীঘ্রই আগত জাহাজে উঠবেন। আজকের জোয়ারে বার্থ করা হবে জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জেটিতে জাহাজ ফেরানোর পর শুরু হবে জাহাজে পণ্য উঠানামা। বন্দর জেটি থেকে শুরু হবে কন্টেইনার ডেলিভারি কার্যক্রম।
সকাল ১১টা ৩০ মিনিট
রিমালের প্রভাবে চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টিপাত, জলাবদ্ধতা
রিমালের প্রভাবে চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর নিম্নাঞ্চলের এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, রোববার (২৭ মে) সকাল ৯টা থেকে সোমবার (২৮ মে) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২০৫.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পতেঙ্গা স্টেশনের ডিউটি ফোরকাস্টিং অফিসার এমএইচএম মোসাদ্দেক টিবিএসকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ (সোমবার) সারাদিন চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত থাকবে। আগামীকালও (মঙ্গলবার) বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে।
রিমালকে কেন্দ্র করে শনিবার (২৫ মে) রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীসহ ১৫টি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১ হাজার ৩৪টি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২২১টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইফুল্লাহ মজুমদার টিবিএসকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রামে এখনো কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। এছাড়া ৬৯৬টি গবাদিপশুকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।
এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রভাবে চট্টগ্রাম নগরীর নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর হালিশহর, পাহাড়তলী, জিইসি, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া, চকবাজার, বায়েজিদ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হালিশহর আকমল আলী ঘাট এলাকার বেড়িবাঁধ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সকাল ১০টা ৫০ মিনিট
বরিশালে ৬ ফুট উঁচুতে প্রবাহিত নদীর পানি, পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বরিশাল শহরে জোয়ারের পানি ঢুকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শহরের উপকণ্ঠ, জেলার বিভিন্ন উপজেলা সদর ও আশপাশেে ইউনিয়ন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বরিশালের চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের বাসিন্দা সুমন বেপারী বলেন, 'আমাদের বাড়িঘর সব তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি আর বাতাসে ঘর, গাছপালা ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে।'
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, বিভাগের সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ নদীরগুলোর কয়েকটি ১ থেকে দেড় মিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েকজন পর্যবেক্ষক জানান, বিভাগেের ছয় জেলায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কীর্তনখোলা ও মেঘনা নদীর পানি জোয়ারের সময় ৬ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে প্রবাহিত হয়। যে কারণে এই নদী দুটির নিকটবর্তী এলাকা বেশ প্লাবিত হয়েছে। এর সঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাত পানি আরও বাড়িয়েছে।
পানি নামতে সপ্তাহখানেক সময় নেবে বলেও জানান তারা।
সকাল ৯টা ৩০ মিনিট
১৭ ঘণ্টা পর চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা শুরু
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ১৭ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুরু হয়েছে বিমান উঠানামা।
সোমবার (২৭ মে) ভোর পাঁচটা থেকে বিমানবন্দরের যাত্রী পরিবহন সেবা কার্যক্রম শুরু হয়।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তসলিম আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তসলিম আহমেদ টিবিএসকে বলেন, বিমানবন্দর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর সোমবার সকাল দশটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের দুটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এবং একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট অবতরণ করে।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রামে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রোববার দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে সময় বাড়িয়ে সোমবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়।
সকাল ৯টা
ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে মাঠে উত্তর সিটির কুইক রেসপন্স টিম
ঘূর্ণিঝড় রেমাডের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সারা দেশে।
গতকাল রাত থেকে রাজধানীতে ভারী বর্ষণ হওয়ায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
আজ সকালে শিক্ষার্থী ও অফিসগামীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কুইক রেসপন্স টিমকে সমস্যা সমাধানের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সকাল ৮টা
উপকূলের পর স্থলভাগও রিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড, রাজধানীতেও দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব দেখেছে বরিশালের উপকূল। এতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে কলাপাড়া, খেপুপাড়া, রাঙ্গাবালি, বরগুনা, পাথরঘাটা, মনপুরা, বোরহানউদ্দিন, দৌলতখানসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট, কোথাও কোথাও ৬ থেকে ৭ ফুট ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের ওপর দিয়েও প্রচণ্ড বেগে ঝড় বয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায়ও শুরু হয়েছে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত। আজ সোমবার (২৭ মে) ভোর থেকে আরম্ভ হয় বৃষ্টি।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে রোববার বিকেল ও সন্ধ্যা থেকে বাগেরহাট, ভোলা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদীতীরের বাসিন্দা শামীম সিকদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'খুব ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। ঘরের চালা নিয়ে গেছে। নদীর পানি প্লাবিত হয়ে চারদিকে তলিয়ে গেছে। গাছপালা ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছে। কত-শত ঘর ভেঙেছে, ধারণাও করা যাচ্ছে না।'
রাঙ্গাবালী উপজেলার সাবেক ইউপি মেম্বার এমাদুল বেপারী গত রাতে জানান, পুরো উপজেলা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। পানি ক্রমেই বাড়ছে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, বিভাগের ছয় জেলায় ৩ লাখের মতো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া, মঞ্জুপাড়া, চর চান্দুপাড়া, হাসনাপাড়া, চন্দপাড়া, পশুরিবুনিয়া, ছোট পাঁচ নম্বর, বড় পাঁচ নম্বর ও বানাতিসহ নয়টি গ্রামের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে ২৪টি গ্রামের ঘরবাড়ি।
ভোলা জেলার ধনিয়া, নাছির মাঝি, রাজাপুর, শিবপুর, চটকিমারার চর, চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, কুকরী-মুকরি ও চর পাতিলা, দৌলুতখানের সৈয়দপর, মনপুরার পুরো উপজেলাসহ কমপক্ষে ১৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বরগুনা, আমতলী, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলার ১০০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধ।
এদিকে বরিশাল জেলার হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, মুলাদী, বাকেরগঞ্জ এলাকায় প্লাবনের পরিমাণ বেশি। জেলার কমপক্ষে ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পিরোজপুরেও অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪২টি উপজেলা বর্তমানে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। প্রবল বর্ষণ আর বাতাসের বেগে ক্যাবল ছিড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে।
পটুয়াখালীর খেপুপাড়া রাডার স্টেশনের ইনচার্জ আব্দুল জব্বার শরীফ বলেন, ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল হয়ে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ৫-৬ ঘণ্টা উপকূলে থাকতে পারে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, বরিশালের বুড়িশ্বর নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ঝালকাঠির বিশখালী ২৬ সেন্টিমিটার, ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার সুরা-মেঘনা নদীর পানি ৬৪ সেন্টিমিটার, তজুমদ্দিনের মেঘনা ১ মিটার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ভোলার তেঁতুলিয়া ১৪ সেন্টিমিটার, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার বুড়িশ্বর ৩৫ সেন্টিমিটার, বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার বুড়িশ্বর নদীর পানি ৩৩ সেন্টিমিটার, বরগুনা সদরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বিশখালী ৬৭ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বিশখালী ৭২ সেন্টিমিটার, পিরোজপুর জেলার বলেশ্বর নদী ৩৩ সেন্টিমিটার ও পিরোজপুরের কঁচা নদী ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।