ঘূর্ণিঝড় রিমাল: বাংলাদেশ ও ভারতে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ভারত ও বাংলাদেশে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রিমালের তাণ্ডবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও ভারতীয় উপকূল এলাকায় ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া, প্রবল বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছ্বাসে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আছড়ে পড়ালে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত হানা এলাকায় প্রায় ৮.৪ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করত, যার মধ্যে শিশুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩.৬ মিলিয়ন।
রোববার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মোংলা বন্দর এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপপুঞ্জের মধ্য দিয়ে অতিক্রমের পরের দিন সোমবারে এটি দুর্বল হয়ে পড়ে। সোমবার বিকাল নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। কেউ পানিতে ডুবে মারা গেছেন, আবার কেউ নিজের ধসে পড়া বাড়ির নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন।
"মোট ৩.৭৫ মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন... ঘূর্ণিঝড়ে ৩৫,৪৮৩টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও আন্তত ১,১৫,৯৯২টি বাড়ি," জানান প্রতিমন্ত্রী।
এছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতেও চলেছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের ব্যাপক তাণ্ডব। দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সুমিত গুপ্তা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ জনসহ অন্তত ৬ জনের মৃত্যুর খবর বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন।
ঘূর্ণিঝড়ে দুইদেশে হাজার হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে, উপড়ে গেছে গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুর্ঘটনা এড়াতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আগে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার প্রায় তিন মিলিয়ন মানুষের বিদ্যুৎসংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ঝড়ের তাণ্ডবে অন্তত ১,২০০ বিদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে গেছে।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার রাহাত রাজা রয়টার্সকে বলেন, "রাত থেকে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, যে কোনো সময় চার্জ শেষ হয়ে আমার মোবাইল বন্ধ হয়ে যাবে।"
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বাগেরহাটের মোহাম্মদ আলী বিবিসিকে জানান ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এমনকি খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, "রাস্তায় কোনো যানবাহন নেই। খাবারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গতকাল থেকে সব দোকানপাট বন্ধ।"
দেশের ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো দক্ষিণ-পূর্বের কক্সবাজার, যেখানে প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের আশ্রয় শিবিরগুলো অস্থায়ী ও দুর্বল হওয়ায় ঝড়ের তাণ্ডবে এখন ভূমিধস ও বন্যার মতো দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট (আইএফআরসি) জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা লোকেদের সতর্ক করেছে এবং প্রয়োজন হলে তাদেরকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, সংস্থাটি পুনরুদ্ধারের জন্য একটি মেডিকেল টিমসহ দেশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় চারটি জরুরি সাড়াপ্রদান দল পাঠিয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় রিমালের অগ্রসর হওয়ার গতিবিধি লক্ষ্য করছিল বাংলাদেশ ও ভারতের কর্তৃপক্ষ। ফলে দুই দেশই তাণ্ডব শুরু হওয়ার আগে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য কিছুটা সময় পেয়েছে।
ক্ষতি এড়াতে রোববার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় ৫০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়। দুর্ঘটনা এড়াতে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।