দ্রুত বকেয়া বিল ছাড় করতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ আদানি গ্রুপের
বকেয়া বিদ্যুৎ বিল দ্রুত ছাড় করতে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে বিশেষ অনুরোধ করেছেন ঢাকা সফররত ভারতের আদানি গ্রুপের পরিচালক প্রণব আদানি। বর্তমানে কোম্পানিটির কাছে বাংলাদেশের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার।
বুধবার (২৯ মে) বিকালে সচিবালয়ে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রণব আদানি।
এ সময় তিনি অর্থমন্ত্রীকে বিদ্যুতের বকেয়া বিল দ্রুত ছাড় করার অনুরোধ করেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, এর আগে বকেয়া পরিশোধ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ করেছে আদানি গ্রুপ।
এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশের জ্বালানি ও কৃষি খাতে আদানি গ্রুপের বিনিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রণব আদানি একাধারে আদানি গ্রুপের পরিচালকের পাশাপাশি আদানি অ্যাগ্রো, অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবেও নিযুক্ত রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'আদানি গ্রুপ দ্রুত তাদের বকেয়া পাওনা চাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগও যথাসম্ভব দিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের চেষ্টা রয়েছে বকেয়া দুই মাসের মধ্যে নামিয়ে আনার।'
তিনি বলেন, 'বর্তমানে পাঁচ মাসের বকেয়া রয়েছে। এতে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পড়েছে। তবে সাধারণত ৪৫ দিনের আগে বিল করা যায় না, আর বিল সাবমিট করতে আরও ১৫ দিন লেগে যায়। ফলে দুই মাসের বকেয়া স্বাভাবিক।'
দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এজন্য ভারতের ঝাড়খন্ডে আদানি গ্রুপ একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। যেখান থেকে ১,৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা বাংলাদেশের।
চুক্তি অনুসারে, কেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। গত বছরের জুলাই থেকে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে আদানি গ্রুপ। ২৮ মে-ও আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৮১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছে পিডিবি।
আদানি গ্রুপ ছাড়াও ভারতের ত্রিপুরা স্টেট ইলেকট্রিসিটি কর্পোরেশন লিমিটেডের (টিএসইসিএল) কাছে বাংলাদেশের ১৫০ কোটি টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল বকেয়া জমা পড়েছে।
বিদেশি বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধে ভর্তুর্কি ছাড় না হওয়াই একমাত্র সমস্যা নয় বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ডলার সংকট ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণেও বিদেশি পাওনাদারদের বকেয়া বড় হয়ে যাচ্ছে।
পিডিবি যে দামে বিদ্যুৎ কেনে, বিক্রি করে তার চেয়ে কম দামে। কেনা ও বিক্রি দামের ঘাটতির অংশটুকু সরকার ভর্তুকি হিসেবে দিয়ে থাকে। তবে রাজস্ব সংগ্রহে আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় করোনার সময় থেকে এই ভর্তুকি সময়মতো পরিশোধ করতে পারছে না অর্থ বিভাগ।
এর ফলে ভর্তুকির প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুতের ভর্তুকি বাবদ ৩৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও তা ছাড় হয়নি। এছাড়া দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ব্যাংকঋণ পরিশোধ করার জন্য অর্থ বিভাগ ভর্তুকির অর্থ বাবদ ১৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড দিয়েছে।
সূত্রমতে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব বাজেটের আওতায় অর্থ বিভাগ থেকে বিপিডিবিকে বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয়ের ঘাটতি বাবদ ভর্তুকির অর্থ ছাড়ের জন্য গত এপ্রিলে অর্থ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়।
ওই চিঠিতে চার মাসের (২০২৩ সালের মার্চ–জুন) ভর্তুকির অর্থ বাবদ ১৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে বৈদেশিক বকেয়া বিল বাবদ প্রায় ১০৩ কোটি ডলার এবং অভ্যন্তরীণ বকেয়া বিল বাবদ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা রয়েছে বলে জানা যায়।
সূত্রমতে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এর বাইরে দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া বিল দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার কোটি টাকা।