করমুক্ত আয়সীমা ৬ লাখ টাকা করার দাবি ডেমোক্রেটিক বাজেট মুভমেন্টের
ডেমোক্রেটিক বাজেট মুভমেন্ট ও অক্সফাম, বাংলাদেশ আগামী বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ৬ লাখ টাকা করার দাবি জানিয়েছে।
মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলায় সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম যথার্থ নয় অভিমত পোষণ করে এ দাবি জানান অর্থনীতিবিদরা। একইসাথে বাজেটে সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো এবং অতিদরিদ্রদের জন্য দৈনিক ৫০০ টাকা করে বছরে ন্যূনতম ১০০ দিনের কাজ নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয় জন বাজেট সংসদ নামে অনুষ্ঠানে।
বুধবার (২৯ মে) ঢাকার তোপখানা রোডে সিরডাপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জন বাজেট সংসদের মোট দুটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস), পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যাকশন অ্যান্ড নেটওয়ার্ক (প্রাণ) ও দ্য আর্থ।
'মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক চাপ মোকাবিলায় জন-প্রস্তাবনা'— শীর্ষক প্রথম অধিবেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, "গত দুই-তিন বছর ধরে মুদ্রাস্ফীতি গড়ে ১২ শতাংশের কাছাকাছি থাকছে, এই চাপে মানুষের গড় আয় কমে গেছে প্রায় ২৪ শতাংশের মতো। অন্যদিকে ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিবিদদের মিলিত দুর্নীতিতে অর্থ ও সম্পদ কেবল কেন্দ্রীভূত হচ্ছে না, নির্বিচারে পাচারও হচ্ছে।"
অর্থ পাচার বন্ধ করা সম্ভব হলে, তা দিয়ে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে সাধারণ মানুষের যেসব দাবি আছে, তার অনেকগুলোই পূরণ করা সম্ভব হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক এম এম আকাশ আরো বলেন, "এই অবস্থায় আমাদের করমুক্ত আয়সীমা ৬ লাখ টাকা করতে হবে। একইসাথে মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলায় যেহেতু সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম যথার্থ নয়, তাই বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এছাড়া অতিদরিদ্রদের জন্য দৈনিক ৫০০ টাকা করে বছরে ন্যূনতম ১০০ দিনের কাজ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।"
এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বাজেট ব্যবস্থাপনা আমলা ও ব্যবসায়ীমুখী না করে জনস্বার্থমূলক করা দরকার।
"বর্তমানে উন্নয়নের টাকার উৎস না জেনেই বাজেট করে ফেলা হয় এবং বাজেট সংশোধনে অন্যান্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মতামত সাংবিধানিকভাবে দেওয়ার সুযোগ নেই। সরকারের গণতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থা না থাকার কারণে আজকে দেশের এই আর্থিক দুর্দাশা। এখন যা অবস্থা, ঋণ করে ঋণ পরিশোধ করাও অসম্ভব হয়ে পড়ছে," যোগ করেন তিনি।
একইসঙ্গে, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি হিসেবে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ যে পরিমাণ অর্থ নষ্ট করা হচ্ছে, তা দিয়ে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম পর্যাপ্তভাবে ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।
অনুষ্ঠানে 'সবুজ অর্থনীতি ও যুব লভ্যাংশে বিনিয়োগ'— শীর্ষক দ্বিতীয় অধিবেশনে জীবাশ্ম-জ্বালানি নির্ভরতা কমিয়ে সবুজ অর্থনীতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান বক্তারা।
এই অধিবেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চেইঞ্জ ইনিসিয়েটিভের এম জাকির হোসেন খান, অক্সফ্যাম বাংলাদেশের রুবাইয়া নাসরিন সেঁজুতি এবং দ্য আর্থের মোসলেহ উদ্দিন সূচক।
এ সময় তারা বলেন, সবুজ অর্থনীতি বা গ্রিন ইকোনমির চালিকাশক্তি হচ্ছে কর্মসংস্থানকে গ্রিন করা। গ্রিন কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে অর্থনীতি পরনির্ভরশীল থাকবে। এই ধারণাকে সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য করতে হবে এবং তাদেরকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করে পরিচ্ছন্ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং এই খাতে আগ্রহী বেসরকারি বিনিয়োগে প্রণোদনা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান তারা।