ঢাকার পশুর হাটে কোরবানির পশুর সরবরাহ বাড়লেও বিক্রি জমে ওঠেনি
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বগুড়ার সিংড়া উপজেলা থেকে নিজের পালা গরু নিয়ে রাজধানীর তেজগাঁও এর পলিটেকনিক মাঠে বিক্রি করার জন্য এসেছেন রাশেদুল ইসলাম।
তিনি টিবিএসকে বলেন, "প্রচুর গরু এসেছে বাজারে। কিন্তু বিক্রি সেভাবে জমেনি।"
পশু বিক্রেতারা বলেছেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে কয়েকদিন ধরেই সারাদেশ থেকে প্রচুর কোরবানির পশু ঢাকার কোরবানির হাটে আসছে এবং প্রতিদিনই এর পরিমাণ বাড়ছে।
যদিও প্রতিদিনই প্রচুর দর্শনার্থী হাটগুলো ঘুরতে যাচ্ছেন, বিক্রি সেভাবে শুরু না হওয়ায় হাটগুলো এখনো জমে উঠেনি।
রাশেদুল ইসলাম বলেন, "আমার একটা বড় গরু অনেকেই দাম করছেন। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১১ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে এটার।"
খামারি, বিক্রেতা ও প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর স্থানীয়ভাবে যে পরিমাণ কোরবানির পশুর রয়েছে তা চাহিদার চেয়েও অনেক বেশি। অন্যদিকে সীমান্ত দিয়েও দেশে কিছু কোরবানির পশু ঢোকারও অভিযোগ রয়েছে। সে কারণে উৎপাদন খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গরুর দাম পাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, এ বছর ১.০৭ কোটি পশুর চাহিদার বিপরীতে দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর জোগান রয়েছে ১.২৯ কোটির কাছাকাছি।
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান জানান, এবারে চাহিদার তুলনায় ২২.৭৭ লাখ কোরবানির পশু বেশি রয়েছে, যা আমাদের দেশেই লালন পালন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষের সক্ষমতার সঙ্গে তাল মিলিয়েই প্রতি বছর ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি হয়ে থাকে। এ বছর মানুষের কোরবানি দেওয়ার সক্ষমতার ক্ষেত্রে বছরজুড়ে ১০ শতাংশের কাছাকাছি মুদ্রাস্ফীতি প্রভাব ফেলতে পারে।
সারাদেশ থেকে গরু নিয়ে ঢাকায় আসা বিক্রেতারা বলছেন, ঢাকার বাজারে ইদের দু-তিনদিন আগেই বেশিরভাগ কোরবানির পশু বিক্রি হয়। ১৪ জুন থেকে শুরু হওয়া ঈদের ছুটিতে ব্যাপক বিক্রির আশা করছেন বিক্রেতারা।
ঢাকার মেরাদিয়া পশুর হাটে মেহেরপুর থেকে আসা গরু বিক্রেতা আব্দুল হান্নান টিবিএসকে বলেন, "২.৫ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা দামের মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেড়েছে। তবে এর থেকে ছোট আকারের গরুর সরবরাহ আরো বেশি।"
তিনি আরো বলেন, "আমি ১৪টি গরু নিয়ে এসেছি। ক্রেতারা আসছেন, দাম করছেন। কিন্তু এখনো বিক্রি শুরু হয়নি।"
এই বছর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মিলিয়ে মোট ১৬টি অস্থায়ী কোরবানির হাট বসেছে। এছাড়া গাবতলি ও সারুলিয়ায় দুটি স্থায়ী পশু কেনাবেচার হাট রয়েছে। এই বাইরে বিভিন্ন অনলাইনে মাধ্যমেও গরু বেচাকেনা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে কোরবানির পশুর চাহিদায় এবং দামে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আগে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার পশু বেশী বিক্রি হত। কিন্তু অনেক বাণিজ্যিক খামার তৈরি হওয়া এবং কোরবানিকে কেন্দ্র করে অনেকেই উন্নত জাতের গরু পালনের কারণে এখন ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা দামের গরুও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এতে বাজার আরো বড় হয়েছে।
এর ফলে এই বছর ১.৫ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকার গরুর পাশাপাশি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার গরুও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
লাইভস্টক ডিপার্টমেন্ট এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ঈদুল আজহার সময় এক কোটির বেশি পশু কোরবানি হয়েছে। এর মধ্যে গরুই ছিল ৪৮.৮১ লাখ। এছাড়া ১.৭৮ লাখ মহিষ, ৪৮.৪৯ লাখ ছাগলসহ কয়েক লাখ অন্যান্য পশু কোরবানি হয়েছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ছিল ৬৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। ২০১৭ সালে কোরবানি হওয়া পশুর বাজারমূল্য ছিল ৪২ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) এর সভাপতি মো ইমরান হোসেন বলেন, "সারাদেশে প্রচুর বাণিজ্যিক ফিড (খাবার) তৈরি হওয়ার কারণে দেশে এখন কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা বেড়েছে। মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরবানির সংখ্যাও বেড়েছে। আবার একটা শ্রেণীর মানুষ অনেক বড় আকারের গরু কোরবানি দিচ্ছে যেগুলো দেশেই উৎপাদন হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "আমরা সীমান্ত দিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের গরু প্রবেশের খবর পাচ্ছি যা আমাদের খামারিদের জন্য খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এমনিতেই এবারে গরু পালনের খরচ ব্যাপক হারে বেড়েছে এবং খামারিরা এই বাজারটার জন্য সারা বছর বিনিয়োগ করে থাকে।"
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শুধু কোরবানির ঈদের বাজারকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই লাখ খামারি বিভিন্ন ধরনের পশু পালন করেন। এর বাইরেও ঈদকে কেন্দ্র করে পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় অনেক পশু লালন পালন করা হয়।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে পশু খাদ্যের বাড়তি দাম গরুর দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ কোরবানি দিতে চাপের মধ্যে পরতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইন্টিগ্রেটেড ডেইরি রিসার্চ নেটওয়ার্ক (আইডিআরএন) এর তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে প্রাণী খাদ্যের দাম বিশ্ববাজারে ২০.৬ শতাংশ বাড়লেও বাংলাদেশে ৫৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।