প্রকল্প বিলম্ব কমাতে এমআরটি লাইন-৫ এর জন্য অগ্রিম ক্রয় কার্যক্রম শুরু
বৈদেশিক অর্থায়ন জটিলতায় এমআরটি লাইন- ৫ (সাউদার্ন রুট) প্রকল্পের অনুমোদন পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে অনুমোদন পিছিয়ে গেলেও নির্মাণ কাজে যাতে এর প্রভাব না পড়ে সেজন্য অগ্রিম ক্রয় কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
ডিএমটিসিএলের তথ্যমতে, ৫৪ হাজার ৬১৮ কোটি টাকার এ মেগাপ্রকল্পের মূল উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২.৩৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। দক্ষিণ কোরিয়া দেবে ১.৩৫ বিলিয়ন ডলার।
ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা জানান, কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংক তাদের জন্য নির্ধারিত প্যাকেজের নিজেদের নিয়োগ করা পরামর্শকের মাধ্যমে ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) ও সিস্টেম প্যাকেজগুলোর ডিজাইন মূল্যায়ন করবে। তারপর ঋণের আলোচনা করবে। এ জটিলতায় প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়া প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ইতিমধ্যে মেট্রোরেলের এ লাইন নির্মাণে অগ্রিম ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনুমোদন দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং এডিবি। এমআরটির এ রুটটি গাবতলী থেকে আফতাব নগর পর্যন্ত ১৩.১০ কিলোমিটার যাবে মাটির নিচ দিয়ে এবং আফতাব নগর থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ৪.১০ কিলোমিটার যাবে উড়াল পথে।
ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত উন্নয়ন প্রকল্পে ক্রয় কাজ শুরু হয় মূল প্রকল্প অনুমোদনের পরে। ক্রয় কার্যক্রমের প্রথমে নির্মাণ তত্ত্বাবধান পরামর্শক (সিএসসি) নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এক-দুই বছর সময় লাগে। এমআরটি-৫ সাউদার্ন প্রকল্পে অগ্রিম ক্রয় প্রক্রিয়ার কারণে প্রকলপ্ অনুমোদনের পর অন্তত এক বছর সময় বাঁচবে।
প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। এখনই সিএসসি নিয়োগ কাযক্রম শুরু করা না গেলে নির্ধারিত শিডিউলের মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে মেট্রোরেলের কাজ শেষ করা যাবে না। এ কারণে এই কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিএমটিসিএলে কর্মকর্তারা।
পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৫৪ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে এ প্রকল্পে কেবল এডিবির ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। পরে এতে যুক্ত হয় কোরিয়া। এক্ষেত্রে মূল উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হিসেবে এডিবি কনসালট্যান্সি ও সিভিল প্যাকেজগুলোতে অর্থায়ন করবে। কো-ফাইন্যান্সার হিসেবে কোরিয়া ঋণ দেবে সিস্টেম প্যাকেজগুলোতে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. মোহাম্মাদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান টিবিএসকে বলেন, গত ২৩ এপ্রিল মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে প্রকল্প পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুনর্গঠিত প্রকল্প প্রস্তাবে বৈদেশিক ঋণের উৎস কীভাবে নিশ্চিত হবে, সেটির ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
তিনি আরো বলেন, 'যেহেতু এডিবির মতো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের সমীক্ষা ও ডিজাইন করেছে, সেক্ষেত্রে অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থা, পর্যালোচনায় বেশি সময় নেবে বলে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে।'
তিনি বলেন, 'এডিবির অর্থায়নের এমআরটি-৫ সাউদার্ন রুটের কারিগরি সহায়তা প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি মূল প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়ার কারণে যাতে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের শিডিউল ব্যহত না হয়, সেজন্য গত বুধবার কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া মূল নির্মাণ কাজ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য অগ্রিম ক্রয় প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে।'
ডিএমটিসিএলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'যেহেতু কোরিয়ার সাথে ইতিমধ্যেই একটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে, তাই প্রকল্পটির অনুমোদন আটকে থাকবে না।'
তিনি বলেন, তারা আশা করছেন কোরিয়া তার সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন ও সিস্টেম প্যাকেজের ডিজাইনের মূল্যায়ন ছয় মাসের মধ্যে শেষ করবে।
দরপত্র সংক্রান্ত নথি তৈরির কাজ সম্পন্ন ৭২ শতাংশ
এদিকে এডিবির অর্থায়নের চলমান কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে সমীক্ষা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকৌশলগত নকশা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন নির্মাণ কাজে দরপত্র সংক্রান্ত নথি তৈরি চলমান আছে, যার ৭২ শতাংশ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।
এ কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় দরপত্র সংক্রান্ত নথি প্রস্তুত, দরপত্র আহ্বান ও মূল্যায়নের প্রাথমিক কার্যক্রম, ইন্টারফেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানিং ও সিএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
তবে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক প্যাকেজগুলোর বিডিং ডকুমেন্ট এ কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় করা হবে। এ কারণে চলমান প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।