বগুড়া কারাগার: গণপূর্ত অধিদপ্তরে একাধিকবার সংস্কারের চিঠি দেওয়া হয়েছিল
বগুড়া কারাগারে ১৪০ বছরের বেশি পুরোনো যে কনডেম সেলে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা থাকেন, তা সংস্কারের জন্য এক বছরের বেশি সময় ধরে গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দিয়ে আসছে কারা কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি জেলা কারাগার থেকে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামি পালানোর তদন্তে এ বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্ব পাচ্ছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৫ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে বগুড়া জেলা কারাগারের ছাদ ফুটো করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামি পালানোর ঘণ্টাখনেকের মধ্যেই তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনা তদন্তে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
১৮৮৩ সালে বগুড়া শহরের কেন্দ্রস্থল জলেশ্বরীতলা এবং মালতীনগর এলাকার করতোয়া নদীর পাড়ে নির্মিত হয় জেলা কারাগারটি। তখন থেকেই বগুড়া জেলা কারাগারের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু রয়েছে।
আধুনিক বিচার ব্যবস্থা ও আইন শৃংঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি এই প্রতিষ্ঠান সাড়ে ১৪ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে। এই কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা ৭২০ জন; এরমধ্যে পুরুষ ৬৮৩ জন এবং নারী ৩৭ জন। তবে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন ১,৭০০ জনের বেশি কয়েদি।
কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান জানান, বগুড়া জেলখানা তৈরি হওয়ার পর থেকেই জাফলং ভবন কনডেম সেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই ভবন চুন আর সুরকির মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়।
"পুরোনো হওয়ার ফলে এর ছাদ থেকে রুমের মধ্যে পানি বেয়ে নামে। ছাদের পুরুত্ব ৯ থেকে ১০ ইঞ্চি। সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ গণপূর্তকে এটি সংস্কারের জন্য এক বছরের অধিক সময় ধরে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি," বলেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক।
এদিকে, কারাগারের কনডেম সেল সম্পর্কে বগুড়া জেলা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী এএইচএম শাহরিয়ার বলেন, "আমরা নিয়মিত কারাগার সংস্কার করি। কিন্তু ভবনের ছাদ তো সংস্কারের মধ্যে পড়ে না। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। বিস্তারিত প্রতিবেদনে থাকবে।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, "জেলা কারাগারের আগাম কোনো তথ্যের বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। কনডেম সেলের ছাদ চুন-সুরকির তৈরি তাও জানতাম না। জানতাম রডের তৈরি ছাদ। এ কারণে পরিদর্শন করে আমরা ইনডোর-আউটডোরের নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দিয়েছি বার বার।"
কনডেম সেল সংস্কারের বিষয়ে গণপূর্তকে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে জেলা প্রশাসক জানান, "এই বিষয়টিও আমাকে জানানো হয়নি। তবে আমরা রান্নাঘর,ফ্যান সরবরাহ, মহিলা সেলসহ একাধিক বিষয়ে কাজ করছি। জেল কর্তৃপক্ষ যদি গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দিয়ে থাকে, তাহলে তারা কেন সংস্কার করেনি— বিষয়টি তদন্তে দেখা হবে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও সতর্কতার সাথে কারাগারের এই বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।"