শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে অচল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চুয়েট
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে সোমবার (১ জুলাই) সকাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) শিক্ষক সমিতির ডাকা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দুটি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর বেণু কুমাী দে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'শিক্ষকদের ক্লাস চালিয়ে যেতে আমরা অনুরোধ করেছিলাম। তবে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।'
শিক্ষক নেতারা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হলে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহ হারাবে। শিক্ষকরা সবসময় ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণে কাজ করেন। বর্তমান যে পেনশন স্কিম সরকার চালু করেছে, সেখানে শিক্ষকরা আগের মতো সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।
জানতে চাইলে চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, 'সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলসহ কয়েকটি দাবি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আমরা সারা বাংলাদেশের শিক্ষকরা আন্দোলন করে আসছি। গত তিন কার্যদিবস আমরা কর্মবিরতি পালন করলেও সরকারের উচ্চ মহল থেকে আমাদের সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করা হয়নি।
'তাই বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছি। আমাদের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের কার্যক্রম আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখব।'
গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই এর বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এরপর ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা।
এদিকে শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রোববার চুয়েটের রেজিস্ট্রার শেখ মুহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সই করা এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
আদেশে বলা হয়, চুয়েটের বিভিন্ন বিভাগের চলমান স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সব পরীক্ষা কার্যক্রম অনিবার্যকারণ বশত স্থগিত করা হলো। স্থগিত পরীক্ষাগুলোর পরবর্তী তারিখ স্ব স্ব বিভাগ থেকে পরে ঘোষণা করা হবে।
চুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি জি এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, 'সারা বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কর্মসূচির সঙ্গে চুয়েটের শিক্ষকেরা একাত্মতা পোষণ করে আমরাও সর্বাত্মক কর্মবিরতির ডাক দিয়েছি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে।'
এদিকে রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতির কার্যালয়ে বিভিন্ন দপ্তরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অফিসার ও কর্মচারী সমিতির ডাকে কর্মবিরতি পালন করা হয়।
এদিন পেনশনের প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রণীতব্য এ নীতিমালা বাতিলের দাবিতে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি।
এ সময় বক্তারা বলেন, ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতিতে যাবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা। সোমবার সকাল ৮টা থেকে ১টা পর্যন্ত কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করবেন বলেও জানান তারা।
গত বছর সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ প্রণয়ন করা হয়। সেখানে বলা হয়, আগামী ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি সংস্থার চাকরিতে যারা নতুনভাবে যোগদান করবেন, তারা আগের মতো আর অবসরোত্তর পেনশন সুবিধা পাবেন না। তার পরিবর্তে নতুন চাকরিজীবীদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে।