পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠনের সিদ্ধান্ত সরকারের
পদ্মা সেতু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ সোমবার (১ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে 'পদ্মা ব্রিজ অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স কোম্পানি, পিএলসি'গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, এটি হবে শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি। এর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর টোল আদায়সহ সামগ্রিক কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা করা হবে।
মাহবুব হোসেন জানান, সেতু বিভাগ থেকে পদ্মা সেতু পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য এ কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রস্তাবিত এ কোম্পানির অথোরাইজড ক্যাপিটাল হবে এক হাজার কোটি টাকা। এর একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে, যার সদস্য হবে ১৪ জন। বোর্ডে সেতু বিভাগ, অর্থ বিভাগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
তিনি বলেন, কোম্পানিটির গঠন, জনবল এগুলো পরে নির্ধারণ করা হবে। এ কোম্পানির কাজ হবে পদ্মা সেতু পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা, টোল আদায় ইত্যাদি।
বর্তমানে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের কাজ পরিচালনা করছে। পাঁচ বছরের জন্য তাদের ৬৯৩ কোটি টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা সেতু বিভাগের হয়ে টোল আদায়, সেতুর দুই প্রান্তে ওজন মাপার যন্ত্র বসানো, সেতুতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও আনুষঙ্গিক মেরামতের দায়িত্বে রয়েছে।
পদ্মা সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কবে নাগাদ কোম্পানির অধীন যাবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওই চুক্তি শেষ হওয়ার পর এ কোম্পানি কাজ করবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০২৪-২৭ রপ্তানি নীতি অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা কমিটি। তবে এ নীতিমালার কিছু ক্ষেত্রে ছোটখাটো পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর রপ্তানি বাজারে যে চ্যালেঞ্জ আসবে, সেগুলো অবশ্যই এ রপ্তানি নীতিতে মোকাবিলার উদ্যোগ থাকতে হবে। সফটওয়্যার রপ্তানির পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ডিভাইস রপ্তানি করার উদ্যোগ নিতে হবে। সেজন্য রপ্তানিকারকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে। এছাড়া শাক-সবজিসহ কৃষিপণ্য যাতে আন্তর্জাতিক বাজারের উপযোগী করা যায় সে উদ্যোগও রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।'
এছাড়া বিদেশি আমদানিকারকদের সাথে পণ্য পাঠানো বা লেনদেন সংক্রান্ত কোনো বিরোধ বা জটিলতা হলে সেটি সমাধানের জন্য দেশেই একটি ব্যবস্থা রাখার উদ্যোগ নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
মাহবুব হোসেন বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী নারী রপ্তানিকারকদের বিশেষ সহায়তা দেওয়া, রপ্তানিকারকদের নতুন বাজার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, হস্তশিল্প পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।'
তিনি বলেন, 'মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি হয়েছে। যদিও বলা হয়েছে এটি সাময়িক হিসাব। আগের রপ্তানি নীতিতে (২০২১-২৩) গত জুন শেষে ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া নতুন রপ্তানি নীতি ২০২৪-২৭ এ ২০২৭ সালের জুন শেষে ১১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান মাহবুব হোসেন।
প্রতি তিন বছর পর পর রপ্তানি নীতিমালা করা হয়। সর্বশেষ করা ২০২১-২৩ রপ্তানি নীতিমালার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন।
সোমবারের সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রনটিয়ার টেকনোলজি (শিফট)' আইন ২০২৪ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন জন্য উপস্থাপন করে।
মাহবুব হোসেন জানান, এ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী তার নাম বাদ দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উনার নামে কোনো প্রতিষ্ঠান করা হবে না। উনি এ প্রতিষ্ঠানের নাম 'ইনস্টিটিউট অব ফ্রনটিয়ার টেকনোলজি (শিফট)' রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'এটি মূলত তথ্য, প্রযুক্তি ও যোগাযোগ সংক্রান্ত গবেষণা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, প্রশিক্ষণকেন্দ্রিক হাইলেভেল টেকনোলজি বেইজড ইনস্টিটিউট হবে। মাদারীপুরের শিবচরে এ ইনস্টিটিউট করার উদ্যোগ নিয়েছে আইসিটি বিভাগ।
দ্রুত স্বচ্ছতা ও যত্নের সাথে বাজেট বাস্তবায়নের নির্দেশ
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে যত্ন ও স্বচ্ছতার সঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যত্নের সঙ্গে নজরদারির সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্রুততার সঙ্গে, নিপুণতার সঙ্গে, স্বচ্ছতার সঙ্গে যাতে বাজেট বাস্তবায়ন হয়- সেই বিষয়ে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। এ বিষয়ে যাতে মন্ত্রী ও সচিব সবাই মনোনিবেশ করেন সে নির্দেশনা দিয়েছেন।
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিষয়ে সরকার ও প্রশাসনের অবস্থান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, 'একটা বিষয় পরিষ্কার যে দুর্নীতি সবাই করেন না। হাতে গোনা কিছু লোক করেন। এর জন্য বাকিরা বিব্রত হয়। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে দুর্নীতিবাজদের কোনো সহানুভুতি দেখানো হবে না। প্রশাসন যন্ত্রসহ সরকারের সকল যন্ত্র দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহায়তা দিচ্ছে।'
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'দুর্নীতিবাজদের নানাভাবে বিচার হয়। বিভাগীয়ভাবে হয়। শুধু আর্থিক দুর্নীতি নয়, শৃঙ্খলাজনিত, নৈতিক স্খলনজনিত ক্ষেত্রেও বিচার হয়। দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু বিচার না করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এমন নজির নেই। ডিপার্টমেন্টের বাইরে দুর্নীতির বিচারের জন্য আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রমাণযোগ্য দুর্নীতি থাকলে সেইসব প্রতিষ্ঠান অ্যাকশন নেয়।'
দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরেও চাকরিতে বহাল থাকার কিছু নজির রয়েছে- এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'সবক্ষেত্রেই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। দুর্নীতি দমন কমিশন, আদালত যেভাবে কাজ করেন, ডিপার্টমেন্ট সেভাবে করতে পারে না। ডিপার্টমেন্ট চাকরিতে বহাল রেখেই ব্যবস্থা নেয়। সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে যে সময় লাগে, ততদিন তাকে চাকরিতে বহাল রাখতে হয়। হ্যাঁ, বলা যেতে পারে তাকে সাসপেন্ড কেন করা হয়নি। এ সিদ্ধান্তও বিধিবিধান অনুযায়ী নিতে হয়।'