এক্সপ্লেইনার: শিক্ষার্থীরা কেন কোটা পদ্ধতির প্রতিবাদ করছে?
১৯৭২ সালে কোটা পদ্ধতি প্রবর্তনের মাত্র এক বছর পরই এটি নিয়ে বিরোধীতা শুরু হয়। আজ সোমবার (১ জুলাই) আবারও কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মজার ব্যাপার হলো, বেশ কয়েকটি পাবলিক সার্ভিস সংস্কার কমিটি এবং খোদ পাবলিক সার্ভিস কমিশন এই পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। কিন্তু বহু সমালোচনা সত্ত্বেও পরবর্তী সরকারগুলো এই বিষয়ে কান দেয়নি।
শিক্ষার্থীরা যা চায়:
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সর্বশেষ আজ প্রতিবাদ আন্দোলনে করেছে।
- তারা কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানান।
- সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিলোপ করে ২০১৮ সালের আইন পুনর্বহাল চান তারা।
- তারা কোটা পদ্ধতি সংস্কারের জন্য একটি কমিটি চান।
- তারা চান মেধার ভিত্তিতে আসন পূরণ করা হোক, কোটার ভিত্তিতে নয়।
কোটা পদ্ধতি যেভাবে এলো:
১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। সে সময় দেশ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত।
- পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালির প্রতি হওয়া বহু বছরের বৈষম্য মোকাবিলায় কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়।
- নতুন কোটা পদ্ধতিতে জেলা কোটায় ৪০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০ শতাংশ, যুদ্ধাহত নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং মেধার ভিত্তিতে ২০ শতাংশ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
- দুটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্কার কমিটি যোগ্যতা এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্যারিয়ার পরিকল্পনার ভিত্তিতে বাছাই প্রক্রিয়ার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের সুপারিশ করে।
- ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বেতন ও পরিষেবা কমিশনও যোগ্যতা-ভিত্তিক নিয়োগের সুপারিশ করেছিল।
প্রথম সংস্কার:
কোটা ব্যবস্থা চালুর দশ বছর পর ১৯৮২-১৯৮৪ সালের মধ্যে দুটি সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়। এর একটি ছিল সামরিক আইন কমিটি এবং অন্যটি বেসামরিক কমিটি।
- ১৯৮৫ সালে এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনকালে চাকরিপ্রার্থী পাওয়া না যাওয়ায় যুদ্ধাহত নারীদের কোটা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
- এর পরিবর্তে নারী প্রার্থীদের জন্য কোটা চালু করা হয়।
- প্রথমবারের মতো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা চালু করা হয়।
- ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করে।
- কমিশন কোটা পদ্ধতিকে অসাংবিধানিক আখ্যায়িত করে মেধা কোটা ৪৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ শতাংশ করার সুপারিশ করে।
কোটা নিয়ে সমস্যা:
১৯৮২-১৯৯০ সালের তথ্য থেকে জানা যায়, প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রার্থী না পাওয়ায় বছরের পর বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে একটি সমস্যার ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
- ১৯৮২ সালে ৩০ শতাংশ বরাদ্দের বিপরীতে ৭ শতাংশ কোটা পূর্ণ হয়।
- এর পরবর্তী বছরগুলোতেও এ ধারা অব্যাহত ছিল।
- এ প্রেক্ষাপটে মেধা ও নারী কোটা বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল পিএসসি।
- ১৯৯৭ সালে সরকার মুক্তিযোদ্ধা কোটার মেয়াদ বাড়িয়ে তাদের বংশধরদের অন্তর্ভুক্ত করে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন:
পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান সাদাত হোসাইন ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বলেছিলেন, 'কোটা সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা এবং এটি একটি ব্যতিক্রম। এটা মেধার মূল্যায়নের চেয়ে বেশি হতে পারে না।'
সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এএমএম শওকত আলী তার 'বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস: এ পলিটিক্যাল-অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পার্সপেক্টিভ'- বইয়ে লিখেছেন, 'এই দশ বছর (১৯৮৭-১৯৯৭) সময়কালে সরকারের গঠিত বিভিন্ন কমিটি এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় করা অন্যান্য গবেষণায়ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমানোর সুপারিশ করা হয়। ১৯৮৭ সাল থেকে এই অনুরোধ করা হচ্ছে, কিন্তু দশ বছর ধরে সরকার এ বিষয়ে নীরব রয়েছে।'