ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ ‘আবার শুরু হবে আগস্টে’
বহুলপ্রত্যাশিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ আগস্টে আবার শুরু হতে চলেছে। প্রধান ঠিকাদার ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি (ইতালথাই) জানিয়েছে, নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন পেয়েছে তারা।
বাংলাদেশে ইতালথাই-এর ইনচার্জ এবং ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভাশকন খান্নাভা শনিবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করার প্রস্তুতি চলছে।
খান্নাভা বলেন, 'আমরা ইতিমধ্যে প্রকল্পের ভৌত কাজ ফের শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করেছি। আগামী মাসেই কাজ শুরু হবে।'
অর্থের উৎস ও মোট পরিমাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে খান্নাভা বলেন, বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক উৎস থেকে অর্থ আসছে। তবে অর্থের পরিমাণ বা নির্দিষ্ট করে বিস্তারিত কিছু জানাতে রাজি হননি।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যে অর্থ পাওয়া গেছে, তা দিয়ে প্রকল্পটির অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার খরচের সংকুলান হয়ে যাবে।
তবে ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানিটি প্রায় ৯৫০ মিলিয়ন ডলার পাবে বলে আশা করছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য ছিল ৯৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি তহবিল সংগ্রহ করা। তবে কিছুটা কম পেতে পারি। আমরা এখন সব বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কনফার্মেশন লেটায়ের জন্য অপেক্ষা করছি, শিগগিরই সেটা এসে যাবে আশা করি। চিঠি পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে টাকার অঙ্ক জানানো হবে।'
১৯.৭৩ কিলোমিটার প্রকল্পের জন্য মোট বাজেট ধরা হয়েছে ১.১৩ বিলিয়ন ডলার। সেক্ষেত্রে প্রকল্পের মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করার জন্য এত বড় অঙ্কের অর্থ কেন তোলা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ওই কর্মকর্তা বলেন, 'এ অর্থ শুধু ভৌত নির্মাণের জন্য নয়, আগের ঋণ পরিশোধ ও সমন্বয়ের জন্যও তোলা হচ্ছে।'
প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার সময় সম্পর্কে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভাশকন বলেন, 'আশা করছি আগস্টে আবার কাজ শুরু করার পর ২০২৫ সালের জুন, অর্থাৎ নির্ধারিত ডেডলাইনের মধ্যেই প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে।'
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীর সঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সংযোগকারী এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণকাজ কয়েক দফা বাড়িয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) মডেলের আওতায় নির্মাণ হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এ নির্মাণকাজে বেসরকারি অংশীদার ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেড।
কোম্পানিটির ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক থাইল্যান্ডভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতালথাই। অবশিষ্ট ৪৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক চীনের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না শানদং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ (সিএসআই) ও সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড।
মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৪.৮১ শতাংশ। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বে বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ কার্যত বন্ধ রয়েছে।
২০১১ সালে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প শুরু হয়। এ প্রকল্পে বিনিয়োগকারী হিসেবে এগিয়ে আসে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ইতালথাই।
কিন্তু অর্থের সংস্থান করতে না পারায় ২০১৯ সালে এক্সিম ব্যাংক অভ চায়না ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অভ চায়নার (আইসিবিসি) কাছ থেকে ৮৬১ মিলিয়ন ডলার ঋণ জোগাড় করে ইতালথাই। বিনিময়ে চীনের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানির ৪৯ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি।
পরবর্তীতে ইতালথাই সুদের একটি কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে প্রকল্পটির জন্য ঋণছাড় বন্ধ করে দেয় এক্সিম ব্যাংক অব চায়না ও আইসিবিসি। ঋণছাড় অব্যাহত রাখার জন্য ব্যাংক দুটি ইতালথাইয়ের হাতে থাকা সিংহভাগ শেয়ার সিএসআই ও সিনোহাইড্রোর কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়।
তখন সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারে সালিশি নোটিশ পাঠায় ইতালথাই। এ নিয়ে তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বাংলাদেশের আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। বর্তমানে আপিল বিভাগ ইতালথাইয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুরে প্রথম সালিশি বৈঠক বসা পর্যন্ত শেয়ার হস্তান্তরের স্থিতাবস্থার মেয়াদ বাড়ান।
এদিকে ঠিকাদাররা প্রকল্পের কাজ মেয়াদের মধ্যেই সম্পন্ন করবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্প পরিচালক এএইচএম শাখাওয়াত আখতার বলেন, '২৭ আগস্ট (আপিল বিভাগে) শুনানি আছে। তার আগে সিঙ্গাপুরের সালিশি বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত বা সমাধান আসতে পারে। তারপর পুরোদমে কাজ শুরু হবে। আশা করি আগামী বছরের জুনের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে।'
প্রকল্পের মূল নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। চুক্তি অনুসারে, মূল কাঠামোর নির্মাণব্যয়ের ৭৩ শতাংশের জোগান দেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। আর ২৭ শতাংশ দেবে বাংলাদেশ সরকার, যা ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং (ভিজিএফ) নামে পরিচিত।
প্রকল্পটি তিন ধাপে বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রথম ধাপে বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৭৯.৫৯ শতাংশ। আর তৃতীয় ধাপে মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১২.৪০ শতাংশ।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার। র্যাম্পসহ এর দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশ উদ্বোধন করা হয়।
এর পরদিন বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১.৫ কিলোমিটার অংশ খুলে দেওয়া হয়। পরে কারওয়ান বাজার অংশে নামার সংযোগ সড়ক বা ডাউন র্যাম্প খুলে দেওয়া হয় এ বছরের ২০ মার্চ।