‘আগস্টের ১ম সপ্তাহে নিষ্পত্তি হবে কোটা সংস্কার মামলা’: শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান কাদেরের
আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে সর্বোচ্চ আদালত কোটার বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি জানাবেন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের তার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদেরকে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে পারে এমন কর্মসূচি বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল রেখে হাইকোর্টের রায়ের ওপর আজ বুধবার (১০ জুলাই) চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থীর করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
বুধবার দুপুরে রাজধানী ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে এমন কর্মসূচি বন্ধ করে আদালতের নির্দেশ মেনে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, 'আদালত [আপিল বিভাগ] কোটা সংস্কার নিয়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন। শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ক্লাসে ফিরে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের নির্দেশনা দিয়েছেন।'
আদালত বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেবেন আশা প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।'
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পেনশন নিয়ে আন্দোলনের প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'শিক্ষকদের ব্যাপারটাতেও যোগাযোগ আছে। অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে।'
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
বুধবার স্থিতাবস্থার ঘোষণা দেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
তকে আপিল বিভাগের একমাস স্থিতাবস্থার আদেশ সত্ত্বেও বুধবার 'বাংলা ব্লকেড' আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবি আদালতের কাছে নয়, সরকারের নির্বাহী বিভাগের কাছে বলে জানিয়েছে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আপিল বিভাগের একমাস স্থিতাবস্থার আদেশের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রশীদ জিতু বলেন, 'আমাদের প্রতিবাদ হাইকোর্টের আদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, সরকারের নির্বাহী শাখার সাথে সম্পর্কিত।'
অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়কে আন্দোলন থামানোর একটি কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী হাসনাত আব্দুল্লাহ।
আপিল বিভাগের আদেশের পর হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, 'আমরা রায়টিকে পর্যালোচনা করছি। আমাদের দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে। আমরা চাই একটা কমিশন গঠন করে কোটাকে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে আনা হোক।'
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন।
এ সময় রিট আবেদনকারীরা বলেছিলেন, ৯ম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডের জন্য ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিলুপ্ত করে ১৪ থেকে ২০তম গ্রেডে রাখা হয়েছে, যা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে অপমান করার শামিল।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টের রুলে ঐ পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না — সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
পরবর্তীকালে গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। বলা হয়, সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনরায় বহাল থাকবে।
হাইকোর্টের এ রায়ের ওপরই চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেওয়া হয়েছে।