আন্দোলনের নামে বাংলাদেশের উন্নতির বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের সতর্ক করল ছাত্রলীগ
আন্দোলনের নামে দেশের ছাত্র সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থাকে জিম্মি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পিত স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করলে রুখে দাঁড়ানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাডেমিক পরিবেশ অব্যাহত রাখা, জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে আসা এবং কোটা ইস্যুর যৌক্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধানের দাবি' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বলেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন এমন এক পর্যায়ে যেতে শুরু করেছে যেখানে মনে হচ্ছে এটা ছাত্র সমাজ ও সাধারণ জনগণের মধ্যে দ্বন্দ্ব।
লিখিত বক্তব্যে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, "কোটা ব্যবস্থায় একটি যৌক্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধান এবং সংস্কার আনা এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ। কোটা ইস্যুর সংবেদনশীলতা সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত থাকা সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা যে সমাজ ও জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন নয় তা বোঝা অপরিহার্য।"
তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে সাধারণ জনগণের যাতে কোনো অসুবিধার সৃষ্টি না হয় সেজন্য ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানায় যাতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত না হয়।
তিনি বলেন, দাবি আদায়ে অবরোধ ডাকার মতো স্বেচ্ছাচারিতা, তাড়াহুড়ো কিংবা আকস্মিক সিদ্ধান্তের কোনো প্রয়োজন নেই।
তিনি আরো বলেন, "আন্দোলনের নামে দেশের শিক্ষার্থী সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে জিম্মি করে, জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে, দেশরত্ন শেখ হাসিনা পরিকল্পিত স্মার্ট বাংলাদেশ অভিমুখে অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার যে কোন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দেশের ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে রুখে দাঁড়াবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।"
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "রাষ্ট্র কাঠামোর বেসিক বিষয় না বুঝে জনগণকে জিম্মি করে তথাকথিত আন্দোলন চালানো হলে আন্দোলনকারীদের এটিও মনে রাখা দরকার যে, দেশের আইন বিভাগ সার্বভৌম, বিচার বিভাগ স্বাধীন এবং নির্বাহী বিভাগ জনগণের ভোটে প্রতিষ্ঠিত। তাই অহেতুক কোন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আন্দোলনের কাছে কেউ নতি শিকার করবে না।"
কোটা ব্যবস্থার প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনটি জানায়, কোটা থাকা অবস্থায় সর্বশেষ ৩৬, ৩৭ ও ৩৮তম বিসিএসে নারীদের চাকরি হয় যথাক্রমে ২৫.৮৯ শতাংশ, ২৪.৭৩ শতাংশ এবং ২৬.৮৭ শতাংশ। অপরদিকে কোটা তুলে দেয়ার পর ৪০, ৪১ ও ৪৩তম বিসিএসে নারীদের চাকরি হয় ২১.০৮ শতাংশ, ২১.২০ শতাংশ এবং ১৭.০৫ শতাংশ। এমনকি প্রায় ৫০টি জেলায় বিসিএস ছাড়াও সরকারি যেসব কর্মসংস্থানে সুযোগ ছিল সেগুলোতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব শূন্য হয়ে গেছে
ছাত্রলীগ দাবি করেছে, কোটা উঠে যাবার পর উন্নয়নের মূলধারা থেকে নারীরা ছিটকে পরেছে। জাতিসংঘ ঘোষিত 'প্ল্যানেট ৫০/৫০' অনুযায়ী যেখানে সরকারি চাকরিতে নারীদের ৫০ শতাংশ অংশগ্রহণ থাকা উচিত সেখানে বাংলাদেশে তা ৩০ শতাংশেরও নিচে রয়েছে। কোটা ব্যবস্থা উঠে যাবার কারণে তা আরও প্রান্তিক পর্যায়ে চলে গেছে।
লিখিত বক্তব্যে সাদ্দাম হোসেন বলেন, "৪০তম বিসিএসে দেশের ২৪টি জেলা থেকে এবং ৪১তম বিসিএসে ১৮টি জেলা থেকে একজনও বিসিএস পুলিশে সুপারিশকৃত হয়নি। একইভাবে সমাজের পিছিয়ে পরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্যও এটি সত্য। কোটা থাকা অবস্থায় ৩১ থেকে ৩৮তম বিসিএসে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ১৭৯ জন সুপারিশকৃত হন। কোটা বাতিলের পর ৩৯তম বিসিএসে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২৪ জন সুপারিশ পেয়েছেন এবং ৪০ ও ৪১ বিসিএসে সুপারিশ পেয়েছেন মাত্র দুইজন।"
তিনি আরো বলেন, "কোটা বাতিল অথবা সংস্কারের জন্য দেশব্যাপী যে আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে সে সম্পর্কে পুনরায় ভাববার প্রয়োজন রয়েছে। কোটা সংক্রান্ত বিষয়টির সংবেদনশীলতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল হওয়ার পরও একথা বিবেচনাধীন যে, আন্দোলনকারীরা সমাজ ও দেশ হতে বিচ্ছিন্ন কেউ নয়। নিজেদের দাবি ও সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ চিন্তার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টিও তারা কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না। বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যেন, সাধারণ জনগণ বনাম শিক্ষার্থী এমন একটি অবস্থা দাঁড়িয়ে গেছে।"
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সহ ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরা।
মুখোমুখি অবস্থানে সরকার ও শিক্ষার্থীরা
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে চলমান বিক্ষোভের মধ্যে আদালতের নির্দেশনা মেনে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
কামাল বলেন, "শিক্ষার্থীদের উচিত আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান করা এবং জনসাধারণের অসুবিধার সৃষ্টি করে এমন কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা।"
প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের হাইকোর্টের রায়ে গতকাল (১০ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক মাসব্যাপী স্থিতাবস্থার আদেশ দেন।
আগামী আগস্টে কোটা সংস্কার মামলার চূড়ান্ত শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট 'ব্যবহারিক সিদ্ধান্ত' নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
কাদের বলেন, "কোটা সংস্কারের বিষয়ে আপিল বিভাগ চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেছে। আশা করি আদালত বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেবেন।"
গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সার্কুলারকেও বেআইনি ঘোষণা করা হয়।
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন।
এ সময় রিট আবেদনকারীরা বলেছিলেন, ৯ম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডের জন্য ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিলুপ্ত করে ১৪ থেকে ২০তম গ্রেডে রাখা হয়েছে, যা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে অপমান করার শামিল।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টের রুলে ঐ পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না — সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
পরবর্তীকালে গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। বলা হয়, সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনরায় বহাল থাকবে।