মজুরি বাড়ানোর দাবিতে কাল থেকে সব নিটিং কারখানা বন্ধের ঘোষণা মালিকদের
নিটিং সেক্টরের মজুরি বাড়ানোর দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিটিং ও কলার ফ্যাক্টরি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেওএ)। আগামী সোমবার (১৫ জুলাই) সকাল ৮ টা থেকে এসব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রবিবার (১৪ জুলাই) সংস্থাটি এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেয় নিটিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।
ফ্যাক্টরি বন্ধ রাখার বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে নিশ্চিত করেছেন বিকেওএ সভাপতি সেলিম সারোয়ার।
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'গত ৪ বছরে ডলারের মূল্য ৪০ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে আমদানিকৃত কাঁচামাল যেমন: নিডেল, সিংকার, নিডেল ওয়েল সহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তার সাথে শ্রমিকদের বেতন ভাতা, পরিবহন খরচ, কারখানার ভাড়া বৃদ্ধি এবং দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে নিটিং মালিকরা দিশেহারা। প্রতিমাসে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই আপনাদের দাবির প্রেক্ষিতে নতুন নিটিং মজুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল নিটিং ও কলার ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকবে।'
বিকেওএ এর সভাপতি সেলিম সারোয়ার টিবিএসকে বলেন, 'চার বছর আগে ডলারের রেট ছিলো ৮৪ টাকা, এখন সেই ডলারের দাম ১১৮ টাকা। এই বৃদ্ধির কারণে আমাদের যন্ত্রাংশ কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে। এই বৃদ্ধির কারণে আমরা দাবি জানিয়েছি যে নিটিং মজুরি বৃদ্ধি না করলে আমরা ফ্যাক্টরি চালিয়ে রাখতে পারবো না। এখন এনিয়ে গার্মেন্টস মালিকরা আপত্তি জানিয়েছেন।'
তিনি বলেন, 'কিন্তু আপত্তি জানালে তো লাভ নেই, আমি তো লোকসান দিয়ে বছরের পর বছর নিটিং চালু রাখতে পারবো না। আমরা নতুন মজুরির কথা বলার পর গার্মেন্টস মালিকরা নেগোসিয়েশন করে কমাতে চায়। কিন্তু এভাবে তো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের শ্রমিকদের মজুরি, বিদ্যুৎ বিল, ফ্লোর ভাড়া নিয়ে কোন কথাই বলেনি। যতটুকু বাড়তি চাওয়া হয়েছে তা শুধু ডলারের ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির অনুপাতে। ৫ টাকা করে মজুরি বৃদ্ধি করলে আমরা আপাতত কোনমতে চলতে পারি। সেখানে বাধা দিলে তো কারখানা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় নেই।'
বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধিত নিট কারখানা রয়েছে ১৫০০ এর অধিক। নিবন্ধনের বাইরে আছে ৮ শতাধিক। কিন্তু গত দেড় বছরে কেবলমাত্র নারায়ণগঞ্জের বিসিকেই অন্তত ১০ টির বেশী নিট স্থায়ী বন্ধ হয়ে গেছে। বিসিকের বাইরে নারায়ণগঞ্জ সহ সারাদেশে এই সংখ্যা আরও বেশি।
তাদের দাবি, বিসিকের অন্তত ৮৫ ভাগ নিট ব্যবসায়ী লোকসান গুণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখছেন। এমন পরিস্থিতিতে এই সেক্টর বাঁচাতে হলে মজুরি বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
বিকেওএ-এর নতুন মূল্য তালিকা অনুযায়ী তারা কাপড়ের ধরনের ওপর ভিত্তি করে প্রতি কেজি কাপড় উৎপাদনের জন্য সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫২ টাকা দাম দাবি করা হয়েছে। আগে এই হার সর্বনিম্ন ১৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৯ টাকা পর্যন্ত ছিল।
সেলিম সরোয়ার দাবি করেছেন, তাদের ৩০ শতাংশ কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
বিকেএমইএ -এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম টিবিএসকে বলেন, নিটিং মালিক সমিতি তাদের পরিষেবার মূল্য বাড়ানেোর জন্য বিকেএমইএ -এর সাথে একটি মূল্য তালিকা শেয়ার করেছে। এরপর কোনো বৈঠক ছাড়াই তারা ধর্মঘট ডেকেছে, যা অপ্রত্যাশিত।
তিনি আরও বলেন, 'বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং নতুন আরএমজি মজুরি বোর্ড হওয়ার পরে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কারণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।'
হাতেম বলেন, সমিতির প্রায় ৪৫০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে, তাদের মধ্যে ৩০০ জন নারায়ণগঞ্জের।