গভীর রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ‘ছাত্রলীগের হামলা’, পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাত ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ঘটা বিভিন্ন ঘটনার লাইভ আপডেটটি বন্ধ করা হলো। মঙ্গলবারের বাকি দিনের সর্বশেষ খবরের লাইভ আপডেট পেতে ক্লিক করুন এখানে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) মধ্যরাতের পর থেকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয় বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সংবাদদাতারা জানিয়েছেন। অনেক সাংবাদিক এ সময় হামলার ভয়ে তাদের ফোন ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ বা ছবি তোলা আপাতত বন্ধ রাখেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হন।
মধ্যরাতের পর ছাত্রলীগের কথিত সদস্যরা জাবি শিক্ষার্থীদের হল ও ভিসির বাসভবনে হামলা চালালে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায়। এরপর ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শিক্ষার্থীরা গুলির শব্দ শুনতে পাওয়ার কথাও দাবি করেছেন।
সোমবার (১৫ জুলাই) কোটাসংস্কার আন্দোলনকারী, হাসপাতালের চিকিৎসক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল কর্মকর্তাদের প্রদত্ত তথ্যমতে, সারাদেশের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় ৩২০ জনের বেশি আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে আহতদের সংখ্যার বিষয়ে বিভিন্ন সূত্রের দেওয়া তথ্যে তারতম্য আছে। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসেও আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সংবাদ জানা গেছে।
সরকারি চাকুরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কারের এক দফা দাবি এবং প্রধানমন্ত্রীর গতকালের (রোববার — ১৪ জুলাই) বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার বেলা ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্দোলনকারীরা।
এ দিন বিকেল ৩টার দিক থেকেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রথমে বিজয় একাত্তর হলের ভেতর থেকে তাদের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ইট ছুড়তে থাকেন। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর প্রতিবেদকদের পাঠানো সংবাদ অনুযায়ী সর্বশেষ পরিস্থিতি পড়ুন এ লাইভ আপডেটে।
রাত ৪টা ৩০ মিনিট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এ মুহূর্তে ফাঁকা। এর আগে রাতে এখানে লাঠিসোঁটা হাতে অবস্থান নিয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঘটনাস্থল থেকে আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাত সাড়ে ৪টার দিকে ঢাবি ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি হল কোটা আন্দোলনকারীদের 'দখলে' রয়েছে। শহীদুল্লাহ্ হল, ফজলুল হক হল ও অমর একুশে হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রবেশ করতে পারেননি।
রাত ৩টা ৩০ মিনিট
জাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হচ্ছেন। একই স্থানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও অবস্থান নিয়েছেন বলে আমাদের সংবাদদাতা জানিয়েছেন।
বর্তমানে কয়েকশ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক বাসভবনের ভেতরে আটকা পড়েছেন বলে ঘটনাস্থল থেকে জানান তারা।
রাত ৩টা ৭ মিনিট
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় এখনো ছাত্রলীগের সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। তবে হলগুলোর পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
রাত ৩টা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশের নিক্ষেপ করা রাবার বুলেটে অন্তত চার সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশের গুলিতে আহত সাংবাদিকদের একজন দৈনিক জনকণ্ঠ-এর প্রতিনিধি ওয়াজহাতুল ইসলাম বলেন, 'আমরা বারবার পুলিশকে আমাদের প্রেস কার্ড দেখিয়েছি। নিজেদের সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনে রাবার বুলেট ছোড়েন।'
আহত অন্য সাংবাদিকরা হলেন বণিক বার্তা-এর প্রতিনিধি মেহেদী মামুন, দৈনিক বাংলা-এর প্রতিবেদক আবদুর রহমান সার্জিল ও বাংলাদেশ টুডে-এর প্রতিনিধি জুবায়ের আহমেদ।
রাত ২টা ৫২ মিনিট
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ক্যাম্পাসে গুলি চালানো হচ্ছে।
'গুলি চালানো হচ্ছে। পরিস্থিতি সত্যিই খারাপ,' তিনি টেলিফোনে বলেন।
রাত ২টা ৩২ মিনিট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলের সামনে প্রেস ব্রিফিং করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।
এ সময় তিনি বলেন, 'আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কেউ বাধা দিতে আসলে ফুঁ মেরে উড়িয়ে দেব।'
রাত ২টা
পুলিশ জাবি ক্যাম্পাসে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন শিক্ষার্থী ফোনে টিবিএসকে জানিয়েছেন। তবে পুলিশ কাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ছুড়ছে তা স্পষ্ট নয়।
বিষয়টি নিয়ে টিবিএস বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর ও আশুলিয়া থানায় যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
রাত ১টা
শিক্ষার্থীরা জানান, রাত ১টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনের মাঠে ছাত্রলীগের লোকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
রাত ১২টা ১০ মিনিট
ঢাবি শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, আন্দোলন শেষ করে হলে ফেরার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন হলে প্রবেশ করে হামলা চালিয়েছেন।
এদিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সামনে সংঘর্ষে ঢাকা উত্তরের ৩৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগের অন্তত ৫–৭ জন কর্মী আহত হয়েছেন বলে আহত কয়েকজন ব্যক্তি রাত ১২টার দিকে টিবিএস-এর প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেছেন।
এ সময় তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বের হচ্ছিলেন।
ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী, শহীদুল্লাহ হলের সামনে যুবলীগের প্রায় ২০০ সদস্য মোটরসাইকেল শোডাউন করেছিলেন।
আরেকটি ঘটনায় রাত ৯টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ঢাবির গেস্টরুম ও বিভিন্ন হলরুমে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয় বলে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী টিবিএস-এর কাছে অভিযোগ করেছেন।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে একাত্তর হলের এক ছাত্রকে তার বন্ধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ছাত্র টিবিএসকে বলেন, 'রাত সাড়ে ৯টার দিকে হলের রুম থেকে খাবার খেতে নামলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে ধরে একটি কক্ষে নিয়ে মারধর করে। আমার পায়ে ও হাতে রড দিয়ে আঘাত করে। [এখন] হাত নাড়াতে পারছি না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাকে অন্যায়ভাবে পেটানো হয়েছে। এখন নিজের পরিচয়ও গণমাধ্যমকে দিতে পারছি না। আমার নাম প্রকাশ করলে হয়তো পরে হলেও থাকতে পারব না। পালিয়ে এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছি।'
রাত ১২টা ৫ মিনিট
ছাত্রদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ছাত্রলীগের হামলার খবর পেয়ে পুলিশ জাবি ক্যাম্পাসে ছুটে গেছে।
মুঠোফোনে টিবিএস-এর সঙ্গে কথা বলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রথমে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় বহিরাগত কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী তাদের ওপর হামলা করতে গেলে তারা তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। কিন্তু অনেকে ভেতরে যেতে পারেননি।
পরে পুলিশ উপস্থিত হলে ছাত্রলীগ আরও হামলা থেকে বিরত থাকে।
রাত ১২টা
জাবি ছাত্রলীগের সদস্যরা মধ্যরাতের পর হেলমেট ও হাতে লাঠি নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী।
কয়েকজন শিক্ষার্থী দাবি করেন, তারা গুলির শব্দও শুনেছেন।
হামলার পরপরই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেখানেও ছাত্রলীগের সদস্যরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল সোমবার (১৫ জুলাই)-এর লাইভ আপডেট পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
সম্পাদনা: সুজন সেন গুপ্ত