সংঘাত-কারফিউয়ে ব্যাপক লোকসানে ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীরা
নওগাঁর লখাইজানি গ্রামের সোহেল রানা ১১ বিঘা জমিতে গোলাপ, বেলী ও রজনীগন্ধা ফুলের চাষ করেন। প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে কোটা সংস্কারের দাবিতে 'কমপ্লিট শাটডাউন' ও কারফিউর কারণে তিনি কোনো ফুল বিক্রি করতে পারেননি।
প্রায় ৫০ হাজার টাকার বেলী ও গোলাপ ফুল বাগানেই নষ্ট হয়ে গেছে। এর পাশাপাশি শ্রমিক খরচ ও সার্বিক খরচ হয়েছে প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা।
শুধু নওগাঁর সোহেল রানাই নন, তার মতো সারাদেশের ফুলচাষী ও বিপণন সংশ্লিষ্টরা চলমান পরিস্থিতিতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
তারা জানান, নির্ধারিত সময়ে ফুল কাটা না হলে জমি নষ্ট হয়ে যায়। আর ফুল কাটলেও এখন বিক্রি হচ্ছে না। কিছু জেলা থেকে ঢাকায় ফুল আনা হলেও ক্রেতার অভাবে সেগুলো পঁচে যাচ্ছে। আবার গুনতে হচ্ছে অন্তত ২৫-৩০ শতাংশ বেশি পরিবহন খরচ। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে উৎকন্ঠায় রয়েছেন তারা।
সোহেল রানা টিবিএসকে বলেন, "স্বাভাবিক সময়ে দুই-একদিনের সমস্যা হলেও আমরা ফ্রিজে ফুল রেখে দেই। কিন্তু টানা এক সপ্তাহ ধরে বিক্রি করতে পারছি না। ফ্রিজের ফুলগুলোও পঁচে গেছে। এই লোকসান কাটিয়ে ওঠা আমাদের জন্য কষ্টকর।"
আর্থিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ফুল উৎপাদন হয় যশোর জেলায়। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার আজিজুর রহমানও ৬ বিঘা জমিতে দেশি রজনীগন্ধা ও চায়না গোলাপ চাষ করেছেন।
তিনি জানান, গত পাঁচ দিনে তার অন্তত ৫০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। এ বছর টানা তীব্র তাপপ্রবাহ ও আবহাওয়ার কারণে এমনিতেই ফুল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর পাশাপাশি এখন কারফিউর কারণে আরও বেশি লোকসানে পড়ছেন তিনি। ফুল পঁচে যাচ্ছে বাগানেই।
যশোরের গদখালী গ্রামের ফুল বিক্রেতা নাজমুল হোসেন বলেন, "প্রতিদিন ১০-১৫ হাজার টাকার ফুল কিনে বিক্রি করি। কিন্তু এখন একেবারেই বন্ধ। আমার আয় পুরোই বন্ধ হয়ে আছে।"
রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা ফুল মার্কেটের মধ্যে অন্যতম শাহবাগ। এখানে প্রায় ১০০টি ছোট-বড় দোকান রয়েছে।
শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. লোকমান হোসেন টিবিএসকে বলেন, "গত শুক্রবার থেকে বেচা-কেনা পুরোপুরি বন্ধ। আমি দৈনিক ২০-২৫ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতাম। প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকার ফুল ক্রেতার অভাবে নষ্ট হয়েছে। আমার মতো এমন ১০০টি দোকান রয়েছে। সবাই এমন লোকসানে পড়েছেন।"
তিনি বলেন, "ফুলচাষীরা বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বেন। কারণ ফুল না কাটলে বাগান নষ্ট হয়ে যায়। আর তারা কাটলেও বিক্রি করার লোক নাই। সব সামাজিক অনুষ্ঠান ও প্রোগ্রাম বন্ধ।"
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিভাগের সভাপতি জহির উদ্দিন বাবর টিবিএসকে বলেন, "বাড়তি দাম দিয়ে কিছু ব্যবসায়ী ফুল এনেছিলেন। কিন্তু সেগুলো এখন বিক্রি হচ্ছে না। এ কারণে সোমবার থেকে ফুল আনা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।"
"ব্যবসার অবস্থা এখন ভালো না। ব্যবসায়ীরা পরিবার চালানো নিয়ে সংকটে পড়বেন। প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার ফুল বাগানেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে," যোগ করেন তিনি।