রাজধানীতে শপিংমল খুললেও ক্রেতা নেই, বিকিকিনি কম খাতুনগঞ্জে
কারফিউ শিথিল করার পর দোকানপাট, শপিংমলসহ সবধরনের মার্কেট খুলে দেওয়া হলেও ক্রেতার দেখা নেই বললেই চলে রাজধানীর শপিংমলগুলোতে। অন্যদিকে, টানা ৬ দিনের অচলাবস্থা শেষে চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের দোকানপাট খুললেও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিকিকিনি অনেক কম।
ঢাকা শহরের সবচেয়ে পুরোনো ও ব্যস্ততম শপিং সেন্টারগুলোর একটি মৌচাক মার্কেট। মার্কেট কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাভাবিক সময় প্রতিদিন গড়ে ৫,০০০ হাজার মানুষ এই মার্কেটে আসেন। তবে বুধবার (২৪ জুলাই) দেখা গেলে ভিন্ন চিত্র; মার্কেটে ক্রেতা না থাকায় দোকানিরা বসে খোশগল্প করছেন।
মৌচাক মার্কেট বণিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বেচাকেনা নেই, ক্রেতা উপস্থিতি শূন্যের কোঠায়। মার্কেট খোলা রেখেছি, কারণ ভেবেছিলাম মানুষ আসবে। কিন্তু ক্রেতার উপস্থিতি নেই। আশা করি, আগামী শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।"
মগবাজার ইলোক্ট্র জংসন প্লাস-এর শোরুমে দেখা যায়, অলস বসে রয়েছেন মালিক ও বিক্রয় কর্মী। এ শোরুমের মালিক মোহম্মদ রাসেল বলেন, "শোরুম খোলা রেখেছি, কিন্তু বিক্রি নেই। কারফিউ শিথিল থাকে যেই সময়, সেই সময় খোলা রাখি। ব্যবসা করছি, শোরুম তো খোলা রাখতেই হবে।"
এরমধ্যে দুই-একজন ক্রেতা এসে পানির ফিল্টারের কিট কিনেছেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, "মনে হচ্ছে মানুষের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে আসছে। এ জন্যই আমরা দোকানপাট খুলেছি। মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আশা বড় বিষয়। একেবারে জরুরি না হলে এখন কেউ কিছু কিনতে যাবে না, সেটা আমরা জানি।"
তিনি বলেন, "বেশি দিন দোকান বন্ধ থাকলে মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। খোলা রাখলে এখন মালামাল তো নষ্ট হবে না।"
হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, "যতক্ষণ কারফিউ থাকবে না ততক্ষণ আমরা দোকান, মার্কেট খোলা রাখছি। কারফিউ না থাকলে আমরা স্বাভাবিক সময়ের মতো রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখবো।"
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য মতে, যেকোনো প্রেক্ষাপটে দেশের সব দোকানপাট বন্ধ থাকলে একদিনেই ক্ষতি হয় অন্তত ২,০০০ কোটি টাকার। তবে এবার কতো ক্ষতি হয়েছে, সেটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানাবেন বলে জানান মো. হেলাল উদ্দিন।
খাতুনগঞ্জে লেনদেনে ভোগান্তি
টানা ছয় দিনের অচলাবস্থা শেষে দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার– খাতুনগঞ্জে সব দোকানপাট খুলেছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় চলমান কারফিউয়ের মধ্যে বিকিকিনি এখনো অনেক কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোর সব শাখা না খোলায় অনলাইন লেনদেনে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। এছাড়া গত কয়েকদিন বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহ বন্ধ থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের দাম বাড়তি বলে জানিয়েছেন তারা।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটের একটি পাইকারি দোকানের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সেকান্দার বলেন, "বাজারে দোকানপাট খুললেও দূরদূরান্তের ক্রেতা নেই। কেবল শহরের অভ্যন্তরের দোকানদাররা বাজারে আসায়– কিছু বিক্রি হয়েছে; তবে ব্যাংকের সব শাখা খোলা না থাকায় লেনদেনে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।"
তিনি আরো বলেন, "আজ সকালে এক ক্রেতা পণ্যের দাম পরিশোধ করতে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের একটি চেক দেন। ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখায় গিয়ে সেটি নগদায়ন করা সম্ভব হয়নি। কারণ চেক দেয়া সেই হিসাবধারীর ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখাটি (চট্টগ্রামের নেভি গেট শাখা) এখনো বন্ধ। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক বহদ্দারহাট শাখা বন্ধ থাকায় আরো এক গ্রাহকের চেক নগদায়ন সম্ভব হয়নি।"
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক সাব্বির আহমেদ চৌধুরী বলেন, "আজ সকালে ব্যাংক খোলার পর থেকে ব্রাঞ্চে গ্রাহকদের ভিড়। তবে অন্যান্য লেনদেনের চেয়ে- নগদ টাকা তোলার প্রবণতা বেশি। তবে ব্যাংকের সব শাখা না খোলায়, চেক ক্লিয়ারিং নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। সকাল থেকে বেশ কয়েকটি চেক ক্লিয়ারিংয়ের জন্য জমা দিলেও পাস হয়নি।"
খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, "আজ বুধবার বাজারের প্রায় সকল দোকান ও আড়ত খুলেছে। তবে ক্রেতা কম আসায় বিকিকিনি কম, পণ্যের দামও কিছুটা বাড়তি। গত কয়েক দিন ধরে বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহ বন্ধ থাকায়– নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে।"