কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে সরকার ফৌজদারি অপরাধ করেছে: মানববন্ধনে আইনজীবীরা
দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে সরকার ফৌজদারি অপরাধ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। এর বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
সোমবার (২৯ জুলাই) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে 'আইনজীবী সমাজ'-এর ব্যানারে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে তারা এসব কথা বলেন। এ সময় ব্যানারে লেখা ছিল: 'গণহত্যার বিচার চাই, গায়েবি মামলা-গ্রেপ্তার ও নির্যাতন বন্ধ কর'।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্রদের 'দুষ্কৃতকারী' আখ্যা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, 'পাকিস্তান আমল থেকে আজ পর্যন্ত দেখিনি যে, একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক দাবির কারণে এতগুলো ছাত্রকে হত্যা করা হয়।'
'কোন অধিকারে, কোন আইনে ব্লক রেইড দিয়ে ছাত্রদের তুলে নেওয়া হচ্ছে' প্রশ্ন করে তিনি বলেন, 'আমরা এর ধিক্কার জানাই। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধানকে প্রতি পদে পদে বরখেলাপ করছে সরকার।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে হেফাজতে নেওয়ার সমালোচনা করে আইনজীবী পান্না বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দিকনির্দেশনা আছে। সে দিকনির্দেশনা অমান্য করে ছয়জন সমন্বয়কারীকে আটকে রাখা হয়েছে। বিবৃতি দেওয়ানো হচ্ছে। এর কৈফিয়ত একদিন দিতে হবে।
কোটা আন্দোলনে নিহতদের বিষয়ে শোক জানিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, 'আমরা জানতে চাই, কোথায়, কার হাতে, কতজন মারা গেছেন। এখন হাজারো শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ গণগ্রেপ্তারের মুখে পড়েছেন। শুনেছি, তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না।'
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তোবারক হোসেন বলেন, 'ছাত্ররা যখন একটি দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিল, তখন একজন মন্ত্রী একটি ছাত্র সংগঠনকে লেলিয়ে দিলেন। সেখান থেকে গণ্ডগোল ও অরাজকতার সূত্রপাত। এরপর নির্বিচার গুলি চালায় পুলিশ। এরপর নামানো হলো বিজিবি।'
'পরে সেনাবাহিনী নামিয়ে দেশে কারফিউ জারি করা হলো। এসব অসাংবিধানিক, অন্যায় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সরকার এসব করে দেশের মানুষের সঙ্গে ফৌজদারি অপরাধ করেছ। এর বিচার হওয়া উচিত,' বলেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, গুলি করার পাশাপাশি গণগ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এসব ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আবশ্যকতা রয়েছে।
'এরই অংশ হিসেবে দেশের শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও সাধারণ অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যক্তির সমন্বয়ে জাতীয় গণতদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে,' বলেন তিনি।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।