বিআরটিএর সার্ভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রেজিস্ট্রেশন বন্ধ, বিপাকে গাড়ি আমদানিকারকরা
সার্ভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গাড়ির রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এতে বিপাকে পড়েছেন গাড়ি বিক্রতারা। বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেইকেলস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অয়াসোসিয়েশন (বারভিডা) জানিয়েছে, রেজিস্ট্রেশন বন্ধ থাকায় দৈনিক ৩০-৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে ব্যসায়ীদের।
এ অবস্থায় বিআরটিএ'কে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে বারভিডা। তবে বিআরটিএর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুন ও হামলায় রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয় ও মিরপুরের সার্কেল-১ অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আগুনে সেখানকার ডেটা সেন্টারসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক ডিভাইস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, লাইসেন্স কার্ড, রুট পারমিটসহ চার ধরনের সেবা প্রদান বর্তমানে বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিআরটিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেবা চালু হতে সময় লাগবে; তবে কতটা সময় লাগবে, তা তারা বলতে পারছে না। আগমী এক সপ্তাহ লাগবে কী কী ক্ষতি হয়েছে সেটি বের করতে। প্রধান অফিসের ইলেকট্রিক সিস্টেম, আইটি সিস্টেম ও সার্ভার যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে– সেটি পুনঃস্থাপন করতে সময় লাগবে বলে তারা জানান।
বারভিডার সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন টিবিএসকে বলেন, "আমরা বিআরটিএর ভবন পরিদর্শন করেছি, সংস্থাটির চেয়ারম্যানকে বলেছি সার্ভারে সমস্যা হলে যেন আমাদের ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন এর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রাখলে প্রতিদিন ৩০-৩৫ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।"
গাড়ি রেজিস্ট্রেশন না হওয়াতে গ্রাহকদের কাছ থেকে পুরো টাকা আদায় করতে না পেরে বন্দর থেকে গাড়ি ছাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থানেও জটিলতার মুখে পড়ছেন গাড়ি আমদানিকারকরা।
তিনি আরও বলেন, "যারা গাড়ি কিনছেন সেই ক্রেতারা রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পর পুরো টাকা পরিশোধ করেন। সেই টাকাতো অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে গেল। ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা পেলে বন্দর থেকে আমদানি করা গাড়ি আমরা খালাস করি, টাকা না পেলে বন্দর থেকে আমদানি করা গাড়ি খালাস করতে পারবো না।"
"বন্দরে প্রায় ৪,০০০ আমদানি করা গাড়ির আছে আমাদের। আমরা গাড়ি রেজিস্ট্রশন করতে পারলে, টাকা পেলে গাড়িগুলো ছুটিয়ে আনতে পারবে," যোগ করেন মো. হাবিব উল্লাহ ডন।
বিআরটিএ কোনো সমাধান দিয়েছে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, "তারা বিষয়টি দেখছেন বলে জানিয়েছেন।"
গত ২৮ জুলাই রাজধানীতে বিভিন্ন খাতের ব্যবসয়ীনেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বৈঠক করেন। সেখানে বিষয়টি তাকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাবিব উল্লাহ ডন।
তিনি বলেন, "আমরা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন চালু করার আবেদন জানিয়েছি। তখন সালমান এফ রহমান আমাদের কথা শুনে পাশে থাকা বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে বলেছেন, যেন বিআরটিএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এখন ম্যানুয়ালি রেজিস্ট্রেশন করে দিক, পরবর্তীতে সার্ভার ঠিক হলে তখন অনলাইনে পোস্টিং দিয়ে দিলেই হবে।"
স্বাভাবিক অবস্থায় দিনে ১০০ থেকে ১২০টি ব্যক্তিগত গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হতো বলে জানান হাবিব উল্লাহ ডোন। এই খাতে তাদের বিনিয়োগ ২০,০০০ কোটি টাকা।
ভাঙচুরকে বড় বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করে, সড়ক নিরাপত্তার পরিচালক ও বিআরটিএর মুখপাত্র মো. মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, সম্পূর্ণ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এবং পরিষেবা পুনরায় চালু না হওয়া পর্যন্ত জনগণকে ধৈর্য ধরতে হবে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, "আমরা আমাদের পরিষেবা পুনরুদ্ধারের জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছি। ভাঙচুরের কারণে, আমাদের পুরো বিদ্যুৎ লাইন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সার্ভার বন্ধ হয়ে গেছে। তবে, আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সার্ভারের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন মেরামত করছি; এই সপ্তাহের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।"
তিনি আরও বলেন, "একবার সার্ভার চালু হলে, আমরা অবস্থা মূল্যায়ন করব এবং পরিস্থিতির ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেব।"
বিআরটিএ চেয়ারম্যান আরও বলেন, "সে পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সের কারণে কোনো চালক বা যানবাহনের মালিককে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে হবে না বলে আমরা জনসাধারণকে আশ্বস্ত করতে চাই। যারা এই মুহূর্তে তাদের লাইসেন্স পেতে বা নবায়ন করতে পারছেন না, আমরা তাদের বিষয়ে ইতোমধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানিয়েছি।"