রাজশাহীতে ৪ ঘণ্টা পর মহাসড়ক থেকে সরে গেলেন শিক্ষার্থীরা
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত আগামীকালের 'অসহযোগ আন্দোলন' সফল করার আহ্বান জানিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা পর সড়ক থেকে সরে গেছেন ছাত্র-জনতা। আজ শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে তারা আজকের মতো কর্মসূচি শেষ করেন।
এর আগে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৯ দফা দাবিতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) প্রধান ফটকের সামনের রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও জনতা তাদের সাথে যোগ দেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীরা সড়কে মিছিল করতে থাকেন।
বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সমাবেশস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, আইনজীবী ও শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিয়ে সরকারের পদত্যাগ চান।
সকাল পৌনে ১১টায় রুয়েট গেইট থেকে একটি মিছিল শুরু হয়ে তালাইমারী ও কাজলা ঘুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আসার পর সেখানে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও মিছিলে বাধা দিতে দেখা যায়নি।
সেখানেই আন্দোলনকারীদের কয়েকজন নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্য সাইফুল ইসলামকে মারধর করেন। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, "ছাত্র জনতার মিছিলে মানুষের ঢল নেমেছে। আমার ছাত্রদের নয় দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন আছে। ছাত্র-জনতার জয় অবশম্ভাবী।"
এরপর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গেট থেকে মিছিল নিয়ে তালাইমারি, ভদ্রা হয়ে এসে রেলগেটে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। মিছিল নিয়ে আসা ও রেলগেটে অবস্থানের সময় আন্দোলনকারীদের কয়েকজন তালাইমারি, ভদ্রা ও রেলগেটে পুলিশ বক্স ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ৷
এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী এক যুবককেও মারধর করে। সাংবাদিকরা তার ছবি তুলতে গেলে আন্দোলনকারীরা বাধা দেন।
আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের রাজশাহীর নগর ভবন ও কুমারপাড়া এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা রেলগেটে অবস্থান শেষে ফিরে যান।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম জানান, আন্দোলনকারীরা ভদ্রা, তালাইমারী ও রেলগেট এলাকার তিনটি পুলিশ বক্সে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। আন্দোলনকারীরা ফিরে যাওয়ায় এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত।
কোটা আন্দোলনকারীরা সারাদেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারের সহিংস দমন-পীড়নের প্রতিবাদে আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ এবং রবিবার (৪ আগস্ট) থেকে অনির্দিষ্টকালের "সম্পূর্ণ অসহযোগ" আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা বলেন, "আমরা সকল নাগরিককে আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।"
অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে সকল প্রকার কর ও শুল্ক বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন সমন্বয়কারীরা। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি এবং অন্যান্য ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সমন্বয়কারীরা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার, রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করার এবং সরকার আয়োজিত সব অনুষ্ঠান বয়কট করারও অনুরোধ জানিয়েছেন।