কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়েছেন ২০৯ বন্দি, গুলিতে জঙ্গিসহ নিহত ৬
গাজীপুরে কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) কারারক্ষীদের জিম্মি করে বন্দিদের বিক্ষোভের সময় কারাগার থেকে ২০৯ বন্দি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে তিন জঙ্গিসহ মোট ৬ বন্দি নিহত হয়েছেন।
বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেলে কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কারাগারসূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সের ভেতরে একটি মহিলা কারাগারসহ ৪টি কেন্দ্রীয় কারাগার রয়েছে। এসব কারাগারে বিডিআর বিদ্রোহ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, জঙ্গি, ফাঁসি ও যাবজ্জীবনসহ দুর্ধর্ষ আসামির পাশাপাশি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার অনেক নেতাকর্মীও আছেন।
কারাগারের সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে কারাগারে জঙ্গি ও কিছু সাধারণ বন্দি কারারক্ষীদের জিম্মি করে মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ শুরু করেন। রক্ষীরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই কারা অভ্যন্তরে অল্পসংখ্যক সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। তারাও বন্দিদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
এক পর্যায়ে উত্তেজনা বেড়ে গেলে দেড়টার দিকে বাড়তি সেনাসদস্য হেলিকপ্টারযোগে কারাগারে এসে বন্দিদের নিয়ন্ত্রণ ও শান্ত করেন।
সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, বিক্ষোভের সময় অনেক বন্দি ভেতরে থাকা মই ব্যবহার করে ও দেয়াল ভেঙে পালানোর চেষ্টা করেন। খবর দেওয়া হলে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে সেনাবাহিনীর কয়েকটি দল কারাগারে পৌঁছায়।
'পরে কারারক্ষীরা নিরাপত্তার স্বার্থে গুলি ছোড়েন। গুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ২০৯ জন বন্দি পালিয়ে গেছেন।'
নিহত জঙ্গিদের মধ্যে রয়েছেন হলি আর্টিজানে হামলার মামলার আসামি নরসিংদীর নলভাটা এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে মো. জিন্নাহ (২৮) ও নওগাঁর কাঞ্চনপুর এলাকার আবদুস সালামের ছেলে আসলাম হোসেন মোহন। অন্যজন হলেন একই মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আফজাল হোসেন (৬৩)।
বাকি নিহত বন্দিরা হলেন হত্যা মামলার আসামি মৌলভীবাজারের রামেশ্বপুরের মকবুল মিয়ার ছেলে ইমতিয়াজ পাভেল (২৪), টাঙ্গাইলের তারটিয়া এলাকার রাজ্জাক শেখের ছেলে স্বপন শেখ (৪০) ও সুনামগঞ্জের জলোশা এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে আয়াতুল্লাহ (৩৯)।
নিহতদের ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার বিকেলে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা নিহতদের লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, কারাগারের ভেতরে কারাবন্দিদের বিক্ষোভের খবর শুনে কাশিমপুর কারাগার এলাকায় অতিরিক্ত সেনা ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে ও শান্ত রয়েছে।