২০২৪ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) বরাদ্দের ৮০.৯২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো— যা গত ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বাস্তবায়ন।
এর আগের অর্থবছরে এডিবি বাস্তবায়নের হার ছিল ৮৫.১৭ শতাংশ।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বাস্তায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নসহ সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২৫৪,৩৯১.৬৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছে ২০৫,৮৫৮.৩৬ কোটি টাকা।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন টিবিএসকে বলেন, "প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণ বিলম্ব, ক্রয় প্রক্রিয়ার বিলম্ব, সক্ষমতার অভাবসহ বিভিন্ন ট্রেডিশনাল সমস্যগুলো ছিল; এর সঙ্গে এবার নতুন কিছু সংকট ছিল। যেমন— গত অর্থবছরে ডলারের মূল্য বেড়ে যায়। এতে অনেক ঠিকাদারই ঠিকমতো কাজ করেনি।"
তিনি বলেন, "এছাড়া, গত অর্থবছরের শেষের দিকে কিছু প্রকল্পে পর্যাপ্ত অর্থছাড় দেওয়া হয়নি। এসব কারণে গেল অর্থ বছরে এডিবি বাস্তবায়ন হার কম হয়েছে।"
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কামাল মুজেরি টিবিএসকেবলেন, "সাধারণত দেখা যায়, অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবার-ডিসেম্বর) তাড়াহুড়া করে এডিপির অর্থ খরচ করা হয়। তবে আর্থিক পরিস্থিতির কারণে গত অর্থবছরে এটা করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া এ সময়ে অস্থিরতাও ছিল।"
তিনি বলেন, "এডিপি বাস্তবায়নে তাড়াহুড়া অর্থ ব্যয় করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। গুণগতমান বজায় রেখে এডিবি বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। তাড়াহুড়া করে অর্থ ব্যয়ের কারণে সরকারি অর্থের অপচয় হয়। এছাড় যে উদ্দেশ্যে প্রকল্পে নেওয়া হয়, তা অর্জিত হয় না।"
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সংশোধিত এডিপি বরাদ্দে ৩১.৬৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছিল অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ)। আর শেষ তিন মাসে এই সংস্থা ব্যয় করেছে ৪৪.৯১ শতাংশ অর্থ। একই অবস্থা অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ক্ষেত্রেও।
এদিকে মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশন, আইএমইডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠকে অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা মানসম্মতভাবে এডিপি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানান, প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ে অপচয় বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে গুণগত মান বজায় রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।
এই সময় উপদেষ্টা বলেন, "শুধুমাত্র আর্থিক হিসাবে এডিপি বাস্তবায়ন সঠিক চিত্র উঠে আসে না। বাস্তব ভৌত অগ্রগতিও কত হলে তাও থাকতে হবে।"
এডিপিতে তিন ধরনের উৎস্য থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সরকারের কোষাগারের তহবিল ছাড়াও উন্নয়ন সহযোগীতের ঋণ ও অনুদান অর্থ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হয়। এছাড়া সরকারি সংস্থাগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে কিছু বরাদ্দ থাকে।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, গেল অর্থবছরে সরকারি তহবিল ও বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের থেকে অর্থ ব্যয়ের হার কমেছে। এডিপিতে সরকারি তহবিল থেকে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তার ৭৬.৮৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে সরকারি সংস্থাগুলো। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৮১.১১ শতাংশ।
এদিকে গেল অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের বরাদ্দ থেকে ব্যয় হয়েছে ৮৬.১৯ শতাংশ অর্থ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৯০.২০ শতাংশ।