বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামে দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি
টানা ও ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে চট্টগ্রামের অন্তত ৯টি উপজেলার প্রায় ৪৬ হাজার পরিবারের দুই লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৮৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলাগুলোর সড়কে সড়কে পানি বেড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "উপজেলাগুলোর মধ্যে মিরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলায় ৩৫টি নৌযান উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া ৮৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার পাশাপাশি ১১১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।"
টানা দুদিনের বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর, শিকারপুর, গড়দোয়ারা, দক্ষিণ মাদার্শা, উত্তর মাদার্শা, মেখল, পৌরসভার একাধিক ওয়ার্ড, নাঙ্গলমোড়া, ছিপাতলী মানুষ পানি বন্দী হয়েছেন। ফটিকছড়ি থেকে হেঁয়াকো রামগড় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রাউজান উপজেলার পশ্চিম নোয়াপাড়া, মোকামীপাড়া, সাম মাহালদারপাড়া, ছামিদর কোয়াং, কচুখাইন, দক্ষিণ নোয়াপাড়া, উরকিরচর ইউনিয়নের মইশকরম, সওদাগরপাড়া, সুজারপাড়া, পূর্ব উরকিরচর, খলিফার ঘোনা ও বৈইজ্জাখালি, বাগোয়ান, পশ্চিম গুজরা, গহিরা, নোয়াজিশপুর, চিকদাইর, ডাবুয়াসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। হালদা ও ধুরং নদীতে পানির চাপ বৃদ্ধি এবং পাহাড়ি ডলের কারণে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি স্থানে ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ। এছাড়া ফেনী নদী অধ্যাসিত মিরসরাইয়ের করের হাট, ইছাখালি, শায়েরখালীসহ কয়েকটি এলাকার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডে এলাকাগুলো পাহাড়ি ঢল ও ঝর্ণার কারণেও প্লাবিত হয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম মশিউজ্জামান টিবিএসকে বলেন, "উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এখনো পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আছে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আসেনি।"
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল টিবিএসকে বলেন, "বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৫৮.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আশা করছি, আজ রাত থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।"
এদিকে কাপ্তাই বাঁধের পানির উচ্চতা বাড়ায় স্লুইস গেট খুলে দিয়ে আশঙ্কায় আছে কাপ্তাই, লিচু বাগান ও রাঙ্গুনিয়ার মানুষেরা। বাধ দিয়ে তৈরি করা কৃত্রিম লেক থেকে টারবাইনের মাধ্যমে পানি নির্গমন হয় রাঙ্গুনিয়ায়। তবে পানি উচ্চতা বেড়ে গেলে সরাসরি স্পলিওয়ে ডিসচার্জ করা হয় স্লুইস গেটের কারণে। তখন কাপ্তাই ও লিচুবাগানসহ আশপাশের এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের টিবিএসকে বলেন, পানি ছাড়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ১০৮ ফুটের কাছাকাছি গেলে চিন্তা করা হবে। বৃষ্টিপাতের উপর সবকিছু নির্ভর করছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ১০৪ ফুট পানি আছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পাঁচটি ইউনিটই চালু আছে। এজন্য পর্যাপ্ত পানি নির্গমন হচ্ছে। তাই স্লুইচ গেট খুলে দেওয়ার চিন্তা নেই। গতকাল বুধবার ২টি ইউনিটে ত্রুটি থাকায় সাময়িক বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে এখন সবকটি চলছে।