প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ: নাফিজ সরাফত ও তার স্ত্রীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু
প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে আর্থিক খাতের আলোচিত নাম চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, তার স্ত্রী আনজুমান আরা শহীদ এবং হাসান তাহের ইমাম ও তাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডির ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। আজ রোববার সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সম্প্রতি সিআইডির এক বৈঠকে নাফিজ সরাফাত ও তার স্ত্রীসহ তাদের প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। বৈঠকে উপস্থাপন করা একটি কপি টিবিএসের হাতে এসেছে।
কপিতে বলা হয়, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, তার স্ত্রী আনজুমান আরা শহীদ ও হাসান তাহের ইমামের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। নাফিজ সরাফাত ২০০৮ সালে রেইস ম্যানেজমেন্ট পিসিএল নামে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির লাইসেন্স নেন। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ছিলেন হাসান তাহের ইমাম।
আরও বলা হয়, রেইসের অধীনে বর্তমানে ১৩টি ফান্ড রয়েছে। ফান্ডের অর্থ ব্যক্তিস্বার্থে বিনিয়োগ করে নাফিজ সরাফাত, আনজুমান আরা শহীদ ও হাসান তাহের ইমাম ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) পরিচালক বনে যান। একই কৌশলে নাফিজ সরাফাত তার স্ত্রীকে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক বানান। তবে এতে ফান্ডের কোনো লাভ হয়নি।
সিআইডি সূত্র জানায়, রেইস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ১০টি মিউচুয়াল ফান্ড গঠন করে। ফান্ডগুলোর সম্মিলিত আকার প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। ফান্ডের অর্থ দিয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য যে এফডিআর খোলা হয়, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজেশ করে সেই এফডিআরগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এর ফলে ফান্ডে বিনিয়োগকারীরা কোটি কোটি টাকার মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আরও জানা গেছে, এসটিডি/এসএনডি অ্যাকাউন্টে মাত্র তিন-চার শতাংশ সুদে ফান্ডের সাড়ে ৬০০ বা ৭০০ কোট টাকা জমা রাখা হয়। সুদের দুই-তিন শতাংশ অর্থ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজেশ করে আত্মসাৎ করা হয়। শেয়ারবাজার থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগকারীদের মাঝে বণ্টনের নিয়ম থাকলেও রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ নিয়ম মানেনি। বরং লভ্যাংশের বেশিরভাগ টাকাই তারা আত্মসাৎ করেছে।
এছাড়া বিজিআইসি নামে ব্রোকারেজ হাউজে শেয়ার কেনার জন্য যে টাকা নেওয়া হয়, সেই টাকায় ফান্ডের নামে শেয়ার ক্রয় না করে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের নামে শেয়ার ক্রয় করা হয়। এভাবে ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকার মুনাফা বঞ্চিত করে ওই টাকা তারা আত্মসাৎ করেন।
মাঝে মাঝে ফান্ডের টাকায় একটি কোম্পানির বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনে ইচ্ছা করেই শেয়ারের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতিসাধনও করেন তারা।
উল্লেখ্য, চৌধুরী নাফিজ সরাফত রেইস ম্যানেজমেন্ট পিএলসির চেয়ারম্যানের পাশাপাশি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডেরও চেয়ারম্যান। ২০১৮ সালে রাজুক পূর্বাচল নুতন শহর প্রকল্পে ১৭১.১৬ কাঠার একটি প্লট কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিকে বরাদ্দ দেয়। এতে সরকারের ক্ষতি হয় ৭৭ কোটি টাকা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান বাসির উদ্দীনকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।