রাতভর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত অন্তত ১০০
রাতভর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে বিএম কলেজে আটকে থাকা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে নিজেদের জিম্মায় নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে বিএম কলেজে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিরাপত্তার স্বার্থে বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০০ জনের মতো আহত হয়েছেন। এরমধ্যে ৫৫ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে। কতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের দুই বাসিন্দার মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ থেকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার রাতে বিরোধ নিরসনে বিএম কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ নিজেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবি করা মোস্তাফিজুর রহমান রাফির নেতৃত্বে সেখানে গেলেকথা কাটাকাটি হয়। অপর পক্ষ তার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের জানালে সেখান থেকে ৩০-৪০ জন ঘটনাস্থলে আসে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
এই খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা নগরের বিভিন্ন স্থানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খুঁজতে থাকে। মঙ্গলবার বিকালে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধনও করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ নগরীর বটতলা এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকেও মারধর করা হয়। তখন প্রাণ বাঁচাতে ওই দু'জন দৌড়ে পাশেই থাকা বটতলা পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে আশ্রয় নেয়।
সহপাঠীদের মারধর করার খবর পেয়ে রাত ১২টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০/৫০ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে করে সেখানে গেলে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেই বাসে হামলা চালায়। ঘটনায় বাস চালকসহ ১৫/২০ জন আহত হন। এ মারধরের খবর পৌঁছলে বাস ট্রাক বোঝাই হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশো শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস থেকে বিএম কলেজে গিয়ে হামলা চালায়। এসময় সাথে করে ট্রাক ভর্তি পাথর, বেশ কয়েকটি থ্রি হুইলার ভর্তি ইটের টুকরা, লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সবার হাতেই ছিল রড পাইপ লাঠি আর ধারালো অস্ত্র।
রাত ১টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে প্রশাসনিক ভবন, আবাসিক তিনটি হল এবং শ্রেণি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় তারা। হামলার প্রথম পর্যায়ে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা পালটা হামলা চালানোর চেষ্টা করলেও সংখ্যায় অনেক কম হওয়ায় খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। এরপর বিএম কলেজের পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে ব্যাপক ভাঙচুর তাণ্ডব চালায় ববি শিক্ষার্থীরা।
এ হামলায় আহত অন্তত ২৩ জনকে বরিশাল শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলা চালাতে গিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষার্থী বিএম কলেজের ভেতরে আটকা পড়ে এবং তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা বলে ভোরে সেনাবাহিনীকে জানায় ববি শিক্ষার্থীরা। সকাল ৮টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিএম কলেজ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডে একপক্ষ বাড়ি দখল করতে ভাড়া করে নিয়ে গিয়েছিলো বিএম কলেজের সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া মোস্তাফিজুর রহমান রাফিকে। সেখানে গিয়ে রাফি ও তার সাথে থাকা লোকজন বাড়ির মূল মালিকদের উপর হামলা করে। সেখানে হামলার শিকার হয় আমাদের শিক্ষার্থী জোয়া। খবর পেয়ে আমরা ওই রাতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হামলার কারণ জানতে চাইলে আমাদের উপরও হামলার চেষ্টা করে রাফি।
এদিকে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, বেশ কয়েকদিন যাবৎ এক নারী বিএম কলেজে এসে সমন্বয়কদের সহায়তা চাচ্ছিলেন তার বাড়ি দখল করা হয়েছে জানিয়ে। তো সেই অনুরোধের প্রেক্ষিতে সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান ওই নারীর বাড়িতে তার প্রতিপক্ষের সাথে আলোচনার জন্য যান। তবে বাড়িতে যাওয়ার সাথে সাথেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পরিচয় দেওয়া জোয়া সমন্বয়কদের গালাগাল করে। পরে জোয়া তার বন্ধুদের ফোন দিয়ে আসতে বললে এ সংঘর্ষ বাধে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর উন্মেষ রয় জানান, হামলায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। এখন ৩৩ জনের মত ভর্তি রয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন।
এদিকে সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে বিএম কলেজ এলাকা ত্যাগ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া নিখোঁজ থাকা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থীকে বুঝে পেয়েছে ভারপ্রাপ্ত ভিসি মুহসীন উদ্দিন। বিএম কলেজ অধ্যক্ষ আমিনুল হক ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি মুহসীন উদ্দিনের যৌথ স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে এ খবর জানানো হয়।