তিনি পদত্যাগ করলেন কোথায়? আর উড়ানই বা দিলেন কোত্থেকে?
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার এক মাস পূর্ণ হয়েছে আজ। কিন্তু এখনও এই বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ কর্মকর্তারা।
গত ৫ আগস্টে তার পতনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিটি ছিল মাত্র কয়েকটি শব্দে— 'শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন'। এরপর থেকে গণমাধ্যম তো নয়ই, অন্য কোনো জায়গাতেও আর বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
বঙ্গভবন থেকে শুধু বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে।
তবে সেই পদত্যাগপত্র কখন, কোথায় তিনি স্বাক্ষর করেছিলেন? তিনি কি নিজেই রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছিলেন?— প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সূত্রের সাথে কথা বলেছে টিবিএস।
প্রথমেই দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর দিয়ে নেয়া যাক এবং সেটা হলো 'না'। উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সেদিন বঙ্গভবনে যাননি এবং নিজে পদত্যাগপত্রও জমা দেননি। একজন শীর্ষ সরকারি আমলা পদত্যাগপত্রটি তার হয়ে বঙ্গভবনে নিয়ে গিয়েছিলেন।
রাষ্ট্রপতি সেদিন তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে সরকার ভেঙে দিলে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের টানা শাসনের সমাপ্তি ঘটে।
তবে বিষয়টা এতটাও সহজ ছিল না।
এক বিশাল জনরোষ ও অভ্যুত্থান শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করে। আন্দোলন শুরু হয়েছিল ছোট্ট একটি দাবি নিয়ে—সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার। কিন্তু ১৬ জুলাইয়ের পর সেই আন্দোলন অন্য মোড় নেয়। শত শত বিক্ষোভকারী নিহত হন যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন তরুণ ছাত্র, এমনকি মারা গেছে কিছু শিশুও।
তখন থেকেই মানুষের এক দফা এক দাবি; শেখ হাসিনার পদত্যাগ।
১৫ বছরের দীর্ঘ এ শাসনকাল যা একসময় অটল মনে হয়েছিল, তা শেষ হয়েছে নতুন সরকার গঠনের মাত্র সাত মাসের মাথায়। ছাত্র ও জনগণের তীব্র আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
বিশ্লেষকদের মতে, ৩ আগস্ট সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা যখন সিদ্ধান্ত নেন যে তারা আর গুলি চালাবেন না বরং দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াবেন— তখনই আসলে শেখ হাসিনার বিদায়ের ঘণ্টা বেজে যায়।
৫ আগস্ট দুপুরের দিকে, বাহিনী প্রধানদের সাথে দুই ঘণ্টার উত্তপ্ত আলোচনা শেষে, শেখ হাসিনা শেষমেশ পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। সময় তখন প্রায় দুপুর ১২:৩০।
এরপর স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) গণভবনের কাছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের একটি স্থানে নিয়ে যায় তাকে। সেখানে ইটের স্তূপের পাশে একটি হেলিকপ্টার অপেক্ষমাণ ছিল।
শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা চারটি স্যুটকেস নিয়ে হেলিকপ্টারে ওঠেন, চারপাশে ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী। হেলিকপ্টারটি কুর্মিটোলার বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যায় । তারপর সেখান থেকে একটি সি-১৩০ কার্গো বিমানে করে আগরতলা, ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি।
এর আগেই ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ায় তখনও সাধারণ মানুষ তার পদত্যাগের ব্যাপারে কিছু জানেন না। ভারতে পৌঁছানোর পরই তার পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে।
মূল লেখা থেকে অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন