স্বাভাবিক রয়েছে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল, খোলা অধিকাংশ কারখানা
সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মেনে নেওয়ার পর গতকাল (২৫ সেপ্টেম্বর) থেকেই স্বাভাবিক রয়েছে ঢাকার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি। আজও সেখানে স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ অব্যাহত রয়েছে।
সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ কারখানা খুলেছে; শ্রমিকরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে যোগ দিয়েছেন।
শিল্প সংশ্লিষ্ট, শ্রমিক নেতা ও শিল্প পুলিশের আশা, শিল্পাঞ্চলের স্বাভাবিক এই পরিস্থিতি সামনে অব্যাহত থাকবে এবং অতি শীঘ্রই শিল্প তার স্বাভাবিক গতিতে ফিরে যাবে।
তবে শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও ৫/৬টি কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে আজও কারখানায় কাজ বন্ধ রেখেছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে- নীট এশিয়া ও ফ্যাশন ফোরাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীট এশিয়ার একজন শ্রমিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কারখানাটির শ্রমিকরা গতকালও কাজ না করে কারখানায় কর্মবিরতি পালন করেছেন।
তিনি বলেন, "আমাদের এখানে শ্রমিকরা দাবি করছেন, তারা মালিকের সাথে কথা বলবেন। আন্দোলনের শুরু থেকেই এই দাবি করছেন তারা। তাদের যাবতীয় দাবি-দাওয়া মালিকের সাথেই তারা আলোচনা করতে চান। কিন্তু মালিক আসে না। আজ মালিকের আসার কথা রয়েছে, মালিক এলে শ্রমিকরা মালিকের সাথে কথা বলবেন।"
তিনি আরও বলেন, "মূলত কয়েকজন স্টাফের বিষয়ে শ্রমিকদের আপত্তি রয়েছে, শ্রমিকরা এসব বিষয়ে মালিকের সাথে কথা বলতে চান।"
"আন্দোলন তো সবাই করে না, আমাদের কারখানায় প্রায় দুই হাজার শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে ২০/৩০ জন আন্দোলন শুরু করার পর বাকি শ্রমিকরাও তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলন করেছেন," যোগ করেন এই শ্রমিক।
ফ্যাশন ফোরামের এক শ্রমিক বলেন, "ছুটির টাকা না কাটা, জেনারেল ডিউটি না করানো, পাঁচ বছরে পাঁচটা বেসিক, হাজিরা বোনাস এক হাজার টাকা করা, নাইট বিল ১০০ টাকা করা, কোনো শ্রমিক রিজাইন দিলে তাকে বকেয়া পরিশোধে ৬/৮ মাস পর্যন্ত না ঘোরানো- এগুলো হচ্ছে আমাদের দাবি।"
সরকারসহ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মেনে নেওয়ার পরেও কেন আন্দোলন- এমন প্রশ্নের জবাবে এই শ্রমিক বলেন, "সরকার মেনে নিলেও আমাদের কারখানায় তো সেগুলো মেনে নিয়ে ঘোষণা দেয়নি। স্টাফরা আমাদের জানিয়েছেন, তারা আশেপাশের কারখানাগুলোতে খবর নেবেন, খবর নিয়ে সবাই যদি এগুলো দেয়, তারাও তখন বিবেচনা করবেন। কিন্তু এখনো তারা আমাদের কিছু জানান নি। আমরা চাই, সরকার যেই ১৮ দফা দাবি মেনে নিয়েছে, মালিকপক্ষ একটা সিলসহ সই করে আমাদের নোটিশ দিক অফিশিয়ালভাবে, তাহলে শ্রমিকরা কাজ শুরু করবে।"
শ্রমিকরা কাজ না করায় বেলা ১২টার দিকে কারখানাটি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে নীট এশিয়া এবং ফ্যাশন ফোরামের মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে মালিকপক্ষ কারখানাগুলোতে গিয়ে দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে ঘোষণা দেবেন। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটি করা হচ্ছে না। নীট এশিয়া, ফ্যাশন ফোরামেও আমরা একই সমস্যাই দেখতে পাচ্ছি। শ্রমিকরা চাচ্ছেন মালিক ঘোষণা দিক, কিন্তু মালিক সেখানে যাচ্ছেন না।"
তিনি বলেন, "আমার তো মনে হয় সমস্যা সমাধানে মালিকপক্ষের আসলে সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। আবার অন্তত গ্রুপের অবস্থা দেখেন, তারা ত্রিপাক্ষিক সিদ্ধান্ত না মেনে শ্রমিক ছাটাই করলো, এখন এসবের দায় আপনি কাকে দেবেন?"
বিজিএমইএর তথ্য অনুসারে আজ (২৬ সেপ্টেম্বর) আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে হামীম, শারমীন, নাসা, অনন্ত, মেডলার, আল মুসলিম, নিউএইজ, স্টারলিংসহ অধিকাংশ কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তবে রোজ, পাইওনিয়ার ক্যাজুয়াল ওয়্যার, আঞ্জুমানসহ কয়েকটি কারখানা শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বন্ধ রয়েছে। নীট এশিয়ার শ্রমিকরা কাজ করছে না, ডেকোতে সাধারণ ছুটি রয়েছে।
এর বাইরে শিল্পাঞ্চলের অন্যান্য এলাকা এবং কারখানাগুলোতে কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সকাল থেকে আমরা দেখেছি, গতকালের মত আজও কারখানাগুলোতে শ্রমিকরা কাজ শুরু করেছেন এবং এখন পর্যন্ত (সকাল ১১টা) আমরা কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার তথ্য পাইনি।"
আজ শিল্পাঞ্চলের মোট ১৭টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে ৩টি নন আরএমজি কারখানা।
এছাড়া, বন্ধ কারখানা মধ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় ৯টি এবং ৮টি কারখানায় সাধারণ ছুটি রয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, "যেসব কারখানা এখনো বন্ধ রয়েছে, সেগুলো মূলত বেতন দিতে না পারা এবং কারখানার অভ্যন্তরীণ ঝামেলার কারণে বন্ধ রয়েছে। অন্তত ৮টি কারখানা রয়েছে, যেগুলোতে বেতন সংক্রান্ত ইস্যু আছে।"
"আমরা চেষ্টা করছি, বিজিএমইএ এবং মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা করে বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে," যোগ করেন তিনি।