আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি বহাল রাখতে পারে বাংলাদেশ
বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে আপত্তি থাকলেও ভারতের আদানি পাওয়ার সঙ্গে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বহাল রাখতে পারে বাংলাদেশ। দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ ও আইনি জটিলতার কারণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এ চুক্তি বাতিল না-ও করতে পারে বলে দুটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা চুক্তিগুলোতে জাতীয় স্বার্থ যথাযথভাবে রক্ষা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি প্যানেল গঠন করেছে নতুন সরকার। বিশেষ করে দ্রুত আইনের অধীনে নেওয়া স্বচ্ছতার অভাব থাকা ত্রুটিপূর্ণ প্রকল্পগুলো যাচাই করবে এই কমিটি।
সূত্র আরও জানায়, অনিয়মের নিরেট প্রমাণ ছাড়া আন্তর্জাতিক আদালতে এ চুক্তি নিয়ে আইনি চ্যালেঞ্জ জানালে তাতে ফল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
দ্বিতীয় সূত্র বলেছে, এ চুক্তি থেকে যেহেতু বেরিয়ে আসা সম্ভব না-ও হতে পারে, তাই পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে বিদ্যুতের দাম কমানোই হতে পারে সরকারের জন্য একমাত্র কার্যকর বিকল্প।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেন, 'কমিটি বর্তমানে বিষয়টি পর্যালোচনা করছে, তাই এখনই কোনো মন্তব্য করা সময়োচিত হবে না।'
২০২৩- ২৪ অর্থবছরের সর্বশেষ অডিট রিপোর্টের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) এক কর্মকর্তা বলেন, আদানি পাওয়ার থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে বাংলাদেশের খরচ পড়ে প্রায় ১২ টাকা (০.১০০৮ ডলার)।
তিনি আরও বলেন, এই দাম ভারতের অন্যান্য বেসরকারি উৎপাদনকারীদের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি, আর ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেশি।
চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আদানি পাওয়ারের পাশাপাশি আরও কয়েকটি ভারতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রায় ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে।
ভারতে আদানি গ্রুপের একজন মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ যে চুক্তি পর্যালোচনা করছে, এ বিষয়ে তারা কোনো 'ইঙ্গিত' পাননি।
ওই মুখপাত্র বলেন, 'দিন দিন বকেয়া বেড়ে যাওয়ার পরও আমরা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছি। এটি [বকেয়া] বড় উদ্বেগের বিষয়, এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রমকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।'
ডলার সংকটের কারণে আদানি পাওয়ারের বকেয়া পাওনা ৮০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধে সমস্যায় পড়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া সবমিলিয়ে ভারতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের কাছে ১ বিলিয়ন ডলার পায়।
আদানির মুখপাত্র বলেন, 'আমরা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন, শীঘ্রই আমাদের পাওনা পরিশোধ করা হবে।'
মুখপাত্র আরও বলেন, আদানি যেমন চুক্তির শর্তাবলি মেনে চলেছে, তেমনি বাংলদেশও তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে বলে তাদের আস্থা রয়েছে।
তবে আদানির বিদ্যুতের দাম অন্যান্য সরবরাহকারীদের চেয়ে বেশি কেন—সে প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি।
তবে সমালোচকরা মনে করেন, আদানি চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন।
বিএনপির সিনিয়র নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক রয়টার্সকে বলেন, 'দাম বেশি ধরায় আদানি চুক্তি নিয়ে শুরু থেকেই উদ্বেগ ছিল। সরকার এখন চুক্তিটি পর্যালোচনা করছে, এটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করি।'
আগস্টে রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। নতুন সরকার ইতিমধ্যে সামিট গ্রুপের মতো স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকল্প বাতিল করেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, আরও প্রকল্প বাতিল হতে পারে।