আশুলিয়ায় কারখানায় বিক্ষোভ: ২ মামলায় আসামি সহস্রাধিক, গ্রেপ্তার ১৬
ঢাকার আশুলিয়ায় রোববার (১২ অক্টোবর) ভিন্ন কারণে পৃথক দুটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় সহস্রাধিক পোশাক শ্রমিককে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলায় মোট ১৩৯ জনের নাম উল্লেখ করাসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৯৬০ জনকে।
শনি ও রোববার (১৩ অক্টোবর) আশুলিয়ার ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেড এবং ফিউচার ক্লোথিং লিমিটেড নামে পৃথক দুটি পোশাক কারখানার পক্ষ থেকে আশুলিয়া থানায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়।
যদিও এ বিষয়ে জানতে ফিউচার ক্লথিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (এইচআর, এডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স) এমদাদুল হক এবং ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেড এর সহকারী ব্যবস্থাপক (এডমিন) সুজাত মল্লিকের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা এনিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মামলা দুটিতে কারখানায় হামলা, ভাংচুর, কর্মীদের মারধর এবং লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এসব মামলায় শনিবার দিনের বিভিন্ন সময়ে আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যৌথবাহিনী মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করলে, পুলিশ রোববার দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক।
এরমধ্যে ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেডের দায়েরকৃত মামলায় ৪ জন এবং ফিউচার ক্লথিং লিমিটেডের দায়েরকৃত মামলায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে টিবিএসকে নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৫ জনকে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয় বলেও জানান তিনি। তবে পরবর্তীতে আদালত তাদের কয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন সেটি নিশ্চিত করতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
এর আগে, রোববার শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো সারোয়ার আলম শ্রমিক বিক্ষোভ এবং কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধরের অভিযোগে ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেডের ৪ শ্রমিককে এবং অপর একটি কারখানার সামনে থেকে ৮ জনকে গ্রেপ্তারের কথা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছিলেন।
ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেডের দায়েরকৃত মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৮টার দিকে মামলায় অভিযুক্ত শ্রমিকরাসহ ৮০০/৯০০ অজ্ঞাতনামা বিবাদী কারখানায় প্রবেশ করলেও কারখানায় কাজ না করে অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া করে কারখানার অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন।
এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা কারখানার অভ্যন্তরের সমস্ত গ্লাস, ৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা, দুটি ফায়ার ডোর, দুটি স্টিলের দরজা, ক্যান্টিন হলের শো-কেস, ক্রোকারিজ মালামাল, কম্পিউটারসহ একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস ভাংচুর করেন। এছাড়াও, অভিযুক্তরা কারখানার গেইটে কর্মরত সিকিউরিটি সুপারভাইজার লিমন মিয়া এবং সহকারী সিকিউরিটি সুপারভাইজার জাহিদ হাসানকে মারধর করে এবং একজনকে একতলা ভবনের ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন।
এজাহারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সিসিটিভি হার্ডডিস্ক, একটি ল্যাপটপ, ও একটি পিসি লুটের অভিযোগ আনা হয় যার বাজারমূল্য ১.৬৫ হাজার টাকা।
অভিযোগে আরও বলা হয়, কারখানায় হামলার ঘটনায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে।
ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেডের পক্ষে মামলাটি দায়ের করেন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ম্যানেজার (প্রশাসন) সুজাত মল্লিক। মামলাটিতে ১১৬ জনের নাম উল্লেখ করাসহ ৮০০/৯০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ফিউচার ক্লথিং লিমিটেডের দায়েরকৃত মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে ১৬ জন কারখানাটিতে কর্মরত ছিলেন। তারা কারখানায় কর্মরত থাকাকালীন গত মাসের ১০ তারিখ সকালে অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জন আসামিসহ অভিযুক্তরা অযৌক্তিক দাবিদাওয়া নিয়ে কারখানার স্টাফ, কর্মচারীদের বেআইনীভাবে কারখানার অভ্যন্তরে আটক করে উৎপাদন কাজ বন্ধ রাখার পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন।
পরবর্তীতে কারখানা কর্তৃপক্ষ মামলায় অভিযুক্ত ১৬ জনকে শ্রম আইন অনুযায়ী গত ১০ অক্টোবর চাকুরিচ্যুত করার পর ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্তরা শনিবার কারখানা সংলগ্ন জড়ো হয়ে এবং বাউন্ডারি টপকে কারখানায় প্রবেশের চেষ্টা করে এবং কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।
এ সময় অভিযুক্তরা একজন সুপারভাইজারকে মারধর করেন বলেও মামলায় অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় কারখানার ২.৫ কোটি টাকার শিপমেন্ট-জনিত ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় দাবি করা হয়েছে।
ফিউচার ক্লথিং এর পক্ষে মামলাটি দায়ের করেছেন কারখানার ব্যবস্থাপক (এইচআর, এডমিন, এন্ড কমপ্লায়েন্স) এমদাদুল হক। মামলায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ করাসহ ৫০/৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।