কক্সবাজার সৈকতে আবারও ভেসে এলো দুটি মৃত পরপইস
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে জোয়ারের সঙ্গে আবারও ভেসে এলো পরপর দুইটি মৃত পরপইস। রবিবার (১৩ অক্টোবর) টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের সৈকতে সামুদ্রিক এ স্তন্যপায়ী প্রাণী দুইটি ভেসে আসে।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের(বোরি) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, 'রবিবার দুপুরে টেকনাফের বাহারছড়া সৈকতে একটি মৃত পরপইস ভেসে আসতে দেখে স্থানীয়রা। পরে ঘন্টাখানেক পর একই স্থানে আরেকটি মৃত পরপইস ভেসে আসে। পরপইস দুইটি স্থানীয়রা উদ্ধার করে মাটি চাপা দিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'মৃত উদ্ধার ইন্দোপ্যাসিফিক ফিনলেস পরপইস হিসেবে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম নিওফোকেনা ফোকেনয়েডস। দেখতে ইরাবতী ডলফিনের মতো পরপইস একটি ছোট জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী। কিন্তু এদের পৃষ্ঠীয় পাখনা থাকেনা। বাচ্চা অবস্থায় কালো রঙের হলেও বয়সের সঙ্গে রঙ বিবর্ণ হয়ে যায়। এটি ৫-৬ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের শরীর মজবুত এবং মাথা অনেকটা গোলাকার।'
এই প্রাণীটি অগভীর জল, জলাভূমি ও মোহনা পছন্দ করে। এরা সাধারণত একাকী চলাফেলা করতে পছন্দ করে। কিন্তু মাঝেমধ্যে খাদ্য গ্রহণের সময় এদেরকে ৫ থেকে ১২টি বা ৫০টির অধিক দলবদ্ধ অবস্থায় ঘুরতে দেখা যায়।
মাছ, স্কুইড, চিংড়ি, অক্টোপাস এবং মাঝে মাঝে সামুদ্রিক উদ্ভিদও খাদ্য হিসেবে এরা গ্রহণ করে। সাধারণত বসন্তে বা গ্রীষ্মে প্রাণীটি বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চারা জন্মের পর মায়ের পিঠে লেগে থাকতে দেখা যায়।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় পরপইস বিপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত।
ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির সর্বশেষ জরিপে বঙ্গোপসাগরে মোট ১৩ জাতের সিটাসিয়ান বা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৮ প্রজাতির ডলফিন, ৪ প্রজাতির তিমি ও মাত্র এক প্রজাতির পরপইস রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কক্সবাজার সামুদ্রিক কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, 'মৃত উদ্ধার দুইটি পরপইসের মধ্যে একটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে, নৌকার সঙ্গে সংঘর্ষ কিংবা অন্য কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এটি মারা পড়েছে। তবে অপর একটিতে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই।
তিনি বলেন, শব্দ ও জলদূষণ এবং বাঁধ, পোতাশ্রয়সহ অন্যান্য নির্মাণ কাঠামোর কারণেও এদের জীবন হুমকিতে পড়েছে।
এর আগে সর্বশেষ ৩০ আগস্ট সৈকতে ভেসে আসে মারা একটি স্পিনার ডলফিন, তারও আগে মার্চ, ফেব্রুয়ারিতে একের পর এক কচ্ছপ, ডলফিন ও পরপইস ভেসে আসে।