ভাঙচুর করলে আর ছাড় দেওয়া হবে না: শ্রম সচিব
যদি কোনও (কারখানা) মালিক অন্যায় করে– তাকে আমরা (জেলের) বাইরে দেখতে চাই না। একইসময়ে রাস্তায় যারা ভাঙচুর করছে - তাদেরকেও আর ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এইচ এম সফিকুজ্জামান।
আজ বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকালে গাজীপুরে জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড এ পোশাক শ্রমিকদের জন্য টিসিবি'র ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয় কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
সফিকুজ্জামান বলেন, 'যারা কারখানা ভাংচুর করে তারা শ্রমিক হতে পারে না।'
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেন, 'উৎপাদন ব্যাহত হলে শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নতুন সরকারের কাছে সবার প্রত্যাশা বেশি, তাই সবাই সব দাবি নিয়ে একসাথে চাপ সৃষ্টি না করে, ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন।
পর্যায়ক্রমে টিসিবি পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।
শ্রমিকদের উদ্দেশ্য সেলিম উদ্দিন বলেন, আপনারা যদি বিশৃঙ্খলা করেন, তাহলে অন্য দেশ (পোশাকখাতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী) লাভবান হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, সবাই তাদের ১৬ বছরের ক্ষোভ-বঞ্চনা নিয়ে আমাদের কাছে এসেছে, তবে বহিরাগতরাও এর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছিল। আমরা মালিক ও শ্রমিকদের সহায়তায় ১৮ দফা বাস্তবায়নে সক্ষম হয়েছি। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতার প্রথম সুবিধাভোগী হবেন মেহনতি মানুষ।
জুলাই বিপ্লবে বিভিন্ন খাতের প্রায় শতাধিক শ্রমিক শহীদ হয়েছেন বলে জানান উপদেষ্টা।
পোশাকখাতে স্থিতিশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের সীমাহীন দুর্নীতির পরও অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি।
'বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের ৮৩ থেকে ৮৪ ভাগ পোশাকশিল্প থেকে আসে। এই শিল্পের মেহনতি শ্রমিকদের পরিশ্রমের ফলেই সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের পরও দেশের অর্থনীতি টিকে আছে। আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি, অন্যান্য সেক্টরে চাকরির পর সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ভাতা কিংবা সর্বজনীন স্কিমের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু গার্মেন্টস সেক্টরে একজন শ্রমিক যখন অবসরে যান, তখন তাঁদের এ ধরনের কোনো সুবিধা দেওয়া হয় না। সেই জায়গা থেকে আমার একটা স্বপ্ন হচ্ছে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য পেনশন স্কিম চালু করা। এটা করার জন্য আমাদের হয়তো সময় লাগবে, কিন্তু আমরা এই উদ্যোগটা শুরু করে দিয়ে যেতে চাই। কারণ, একজন শ্রমিক ৮ থেকে ১০ বছর কাজ করার পর আর কর্মক্ষম থাকেন না। তাঁদের জীবনটা তখন দুর্বিষহ অবস্থায় কাটে' - বলছিলেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, 'দীর্ঘ লড়াই শেষে আমরা দায়িত্বে এসেছি। আমাদের প্রতিনিয়ত নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আমরা দায়িত্বে আসার পর শ্রমিকেরা অনেক দাবিদাওয়া উত্থাপন করেছেন। তাঁরা প্রায় ১৬ বছর ধরে যেসব বৈষম্য বা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন, সেসব বিষয় নিয়ে আমাদের কাছে এসেছেন। আমরা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে স্বাগত জানিয়েছি। প্রতিটি সমস্যাকে অ্যাড্রেস করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আর এই সুযোগটা অনেকেই নেওয়ার চেষ্টা করেছে, বহিরাগত ব্যক্তিরা শ্রম-অঞ্চলে অসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে।'
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন– বিজিএমইএ'র সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, বিজিএমইএর পক্ষ থেকে প্রস্তাব করার সাথে সাথে টিসিবি পণ্য বিক্রয় কর্মসূচির ব্যাপারে রাজি হয়।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অনেকদিন ধরে চলে আসছে, এই কর্মসূচি শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সহায়তা করবে।
বিজিএমইএ সভাপতি শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ব্যবহার করতে কারখানাগুলোর কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. এস. এম. রফিকুল ইসলাম নোমান।
অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন – ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা ইকবাল ও গাজীপুরের প্রশাসক নাফিসা আরেফীন।
অনুষ্ঠান শেষে জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিকস লিমিটেড কারখানার এক হাজার শ্রমিকের হাতে টিসিবির পণ্য তুলে দেওয়া হয়। পরবর্তী আরও কয়েকটি ধাপে কারখানাটির ১৩ হাজার শ্রমিককে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে বলে জানা গেছে।